সংক্ষিপ্ত আলোচনা - খেয়াঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর



[ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ebanglaschools এর সমস্ত আলোচনা কোনো পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের জন্য নয়। সাধারণ এবং অতি সাধারণ পিছিয়ে পড়া ছাত্র ছাত্রীদের জন্যই এই উদ্যোগ। তাদের কথা ভবেই এই আলোচনার প্রচেষ্টা। বিশিষ্টরা দূরে থাকুন । আমাদের একান্ত অনুরোধ যদি ছাত্র ছাত্রীরা এই আলোচনা থেকে উপকৃত হও তাহলে নীচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে ভুলে যেও না। ]    



খেয়া - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সংক্ষিপ্ত আলোচনা


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চৈতালি(১৮৯৬) কাব্যগ্রন্থের একটি অন্যতম কবিতা খেয়া। জমিদারী সূত্রে দীর্ঘদীন বাংলাদেশের সাজাদপুর - পাতিসরে থাকাকালীন তিনি নৌকা ভ্রমণ করতেন এবং সেখানেই দুপাশের গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা দুচোখ ভরে উপভোগ করেছিলেন। সেই রকমই এক সময়ে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের চৈত্র থেকে শ্রাবণ মাসের মধ্যেই একটি কবিতা রচনা করলেন, যার নাম ‘খেয়া’, এটি এই কাব্যের ১৯ সংখ্যক একটি কবিতা। যেকোনো কবিতারই সাধারনত দুটি অর্থ থাকে – বাইরের অর্থ ও ভেতরের অর্থ। ‘খেয়া’ কবিতাটি পড়লে সাধারন পাঠকের কাছে উঠে আসে নিটোল এক গ্রামবাংলার মানুষের জীবনযাত্রার সাধারন ছবি। যেখান কবি আঁকেন দুই পাশে দুই জনপদ। একদিকে গ্রাম্যসভ্যতা ও অন্যদিক মফস্বল এবং মাঝখান থেকে বয়ে যাওয়া একটি নদী। এই নদী দুপাশের প্রান্তরকে আলাদা করলেও খেয়া বা নৌকা সেই দুই গ্রামের মানুষকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছে। এই খেয়াকে কেন্দ্র করেই বেঁচে আছে দুটি সভ্যতার মানুষজন। সাধারণ ভাবে আমরা জানি, গ্রামের মানুষের উপার্জিত আয় নির্ভর করে কৃষিজ ফসল বেচাকেনার মধ্য দিয়ে। সেকারনেই উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে নদী পেরিয়ে অন্য প্রান্তে তাদের নিত্য দিন পৌঁছাতে হয়। সেই সূত্র ধরেই তাদের পথ-ঘাট, মানুষ জন, তাদের কাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো পরস্পর পরস্পরকে চিনে নিয়েছে। আর সেখান থেকে অর্জিত অর্থ, সম্পদ তাদের জীবনকে সুন্দর ভাবে বাঁচতে সাহায্য করে। কারো কোনো দিন উপার্জন বেশি হলে যেমন স্মৃতি হয়ে থেকে যায়, তেমনি স্বল্প রোজগারে মনের মধ্যে তৈরি হয় দ্বন্দ্ব, আর উপার্জন না হলে খালি হাতে তাদের ফিরে আসতে হয়। এই সভ্যতা কোনো মানুষকে সহজে কিছু দেয়না, অর্জন করে নিতে হয়। গ্রামবাংলার এই ছবি কোনো নতুন কথা নয়। স্বল্প আয়ের মধ্য দিয়েই তারা ভালো থাকতে চায়, খুঁজে নিতে চায় তাদের আকাঙ্ক্ষা। প্রতিদিনের এই নিত্য যাপনে তাদের জীবন নিষ্পেষিত হয় প্রতিনিয়ত। তবু তারা হেরে যায় না। হয়ত তাদের ও জীবনে স্বচ্ছন্দ আসবে, রাজার মত তারাও সুখী হবে এই প্রত্যাশা নিয়ে বেঁচে থাকে প্রতিটা দিন, আর বেলার শেষে স্বপ্ন ভঙ্গ হলে বিমর্ষ হয়ে তারা ঘরে ফেরে। আশা আকাঙ্ক্ষার এই দোলাচলে এভাবেই কেটে যায় প্রতিটা দিন, প্রতিটা সময়। তাদের মনের দুঃখ কষ্ট কেউ জানতে চায় না। জানতে চায় না তাদের ভাললাগার খুঁটিনাটি। জমিদার আসে , সময় যায় তাদের জীবনের ইতিহাস বদলায় না। স্বাভাবিক ভাবে তাদের জীবনের কথাও কেও জানতে পারে না। শুধু মাত্র খেয়াকে সাথে করে ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাস আর দুইজনপদের উপর আশা রেখে একটু সুখী জীবনের প্রত্যাশা করে প্রতি মুহূর্তে। কবি বলেন, এই জীর্ণ খেয়াই তাদের জীবনের একমাত্র ভরসা, যা তাদের বাঁচিয়ে রেখেছে, স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ গ্রামের মানুষের সেই আর্ত কথাকেই তিনি তুলে ধরেছেন এই কবিতায়।  

COPYRIGHTS পুনর্মুদ্রণ যোগ্য নয়।

0 comments:

Post a Comment