বাংলা ছন্দ


ছন্দ



ছন্দ কাকে বলব ?

'ছন্দ' হল শ্রুতিমধুর শব্দের শিল্পময় বিন্যাস, যা কানে জাগায় ধ্বনি ও সুষমা চিত্তে জায়গায় রস। পদ্য রচনার বিশেষ রীতি । তা কাব্যের প্রধান বাহন। গদ্যেও ছন্দ থাকতে পারে, তবে পদ্যেই তার সুস্পষ্ট প্রকাশ। ছন্দ তাই 'শিল্পিত বাক্যরীতি'।




ছন্দোবদ্ধ কাব্য সবারই পড়তে ভাল লাগে। যেমন-

" হা-ট্টিমা টিম টিম,
তারা মাঠে পাড়ে ডিম,
তাদের খাড়া দুটো শিং,
তারা হা-ট্টিমা টিম টিম। "

এখানে ছন্দের দোলা সব পাঠক মনকে দুলিয়ে দেয়। সুতরাং ছন্দে থাকবে-

১। শ্রুতিমধুর শব্দ ।
২। শব্দ সাজানোর কৌশল 
৩। চিত্তে জাগাবে রস
৪। কানে জাগবে ধ্বনি কল্লোল



ছন্দ শিখতে গেলে আগে কয়েকটি জিনিস আমাদের বুঝে নিতে হবে-
➤ দল

দল বলতে বোঝায় বাগ যন্ত্রের সবচেয়ে কম চেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টি।
দল দুই প্রকার
১। মুক্ত দল
২। রুদ্ধদল


মুক্ত দল: অক্ষর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসের গতিপথ মুক্ত হলে মুক্ত দল।
যেমন- মমতা
ম- ম- তা
ম+অ
ম+অ
ত+আ

রুদ্ধ দল: অক্ষর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসের গতিপথ রুদ্ধ হলে রুদ্ধ দল।
যেমন- যৌবন
যৌ - বন
যো+উ
ব+অ
ন্


মাত্রা বা কলা

মাত্রা বা কলা: একটি অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে সেই সময় কে বলা হয় মাত্রা বা কলা।

যেমন- আমি

যেমন এই “আমি” উচ্চারণে যেটুকু সময় লাগছে তাই হল মাত্রা বা কলা।


ছেদ ও যতি

ছেদ ও যতি: বাক্যের আংশিক অর্থ প্রকাশ এর জন্য ধ্বনি প্রবাহে যে উচ্চারণ বিরতি ঘটে তাকে ছেদ ও যতি বলে।
যেমন - তুমি সেখানে যেওনা, গেলে ক্ষতি হবে।
এখানে ( , ) টা ছেদ ও যতি।



বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ

বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩ প্রকার- ১। স্বরবৃত্ত, ২। মাত্রাবৃত্ত ৩। অক্ষরবৃত্ত । তবে আধুনিক কবিতায় গদ্যছন্দের প্রাধ্যান্যদেখা যায়

স্বরবৃত্ত ছন্দ :  সহজ কথায় যে ছন্দকে তাল ও লয় সহযোগে পড়া যায় , সেই সকল ছন্দকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে। ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়

ü  প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে

ü  সব দল ১ মাত্রা হয়ে থাকে।

ü  দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়া হয়

উদাহরণ-

বাঁশ বা-গা-নের  মা-থার উ-পর  চাঁদ উ-ঠে-ছে  ওই ∣∣ (৪+৪+৪+১)

মা-গো আ-মার  শো-লোক ব-লা  কা-লা দি-দি  কই ∣∣ (৪+৪+৪+১)

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়

ü  অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়

ü  কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত হয়ে থাকে।

উদাহরণ-

এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের  তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের  জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)

বিশ্লেষণঃ কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।

এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-

প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)

দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা

তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা

চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়

ü  অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়

ü  অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা হয়

ü  কোন শব্দ এক অক্ষরের হলে, এবং সেই অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, সেই অক্ষরটির মাত্রা ২ হয়

ü  কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি এমন অক্ষর থাকে, যার শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে

ü  কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়

উদাহরণ-

হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)

বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)

কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)

দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)

(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)

কবিতাটির মূল পর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। স্তবক দুইটি পর্বের হলেও এক পর্বেরও স্তবক আছে।

এখন, মাত্রা গণনা করলে দেখা যায়, প্রথম চরণের,

প্রথম পর্ব- হে কবি, নীরব কেন; হে কবি- হে+ক+বি = ৩ মাত্রা (তিনটি অক্ষরের প্রতিটির শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); নীরব- নী+রব = ১+২ = ৩ মাত্রা (শব্দের শেষের অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় সেটি ২ মাত্রা); কেন- কে+ন = ১+১ = ২ মাত্রা; মোট ৮ মাত্রা

আবার দ্বিতীয় চরণের,

দ্বিতীয় পর্ব- লবে না কি তব বন্দনায়; লবে- ল+বে = ২ মাত্রা; না কি তব = না+কি+ত+ব = ৪ মাত্রা; বন্দনায়- বন+দ+নায় = ১+১+২ = ৪ মাত্রা (বন- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও অক্ষরটি শব্দের শেষে না থাকায় এর মাত্রা ১ হবে; আবার নায়- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি- য় থাকায়, এবং অক্ষরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা হবে ২); মোট ১০ মাত্রা

এরকম-

আসি তবে ধন্যবাদ ∣∣ (৪+৪)

না না সে কি, প্রচুর খেয়েছি ∣∣ (৪+৬)

আপ্যায়ন সমাদর যতটা পেয়েছি ∣∣ (৮+৬)

ধারণাই ছিলো না আমার- ∣∣ (১০)

ধন্যবাদ। ∣∣ (৪)

(ধন্যবাদ; আহসান হাবীব)

অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ : অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে- পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-

সনেট :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ü  বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ

ü  ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়

ü  দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে

ü  সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)

ü  প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষস্টক বলে

ü  এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী, তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে

ü  নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে

ü  দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়

ü  সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়

ü  সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট; এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে।

এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)। নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-

পেত্রার্কীয় রীতি

ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক

চ+ছ+জ চ+ছ+জ

শেক্সপীয়রীয় রীতি

ক+খ+ক+খ

গ+ঘ+গ+ঘ

চ+ছ+চ+ছ

জ+জ

ফরাসি রীতি

ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক

গ+গ চ+ছ+চ+ছ

উদাহরণ-

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;- ∣∣ (৮+৬) ক

তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬) খ

পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬) ক

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬) খ অষ্টক

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬) খ

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ, ∣∣ (৮+৬) ক

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬) খ

কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬) ক

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬) গ

ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬) ঘ

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬) ঘ ষটক

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬) গ

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬) ঙ

মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬) ঙ

(বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কবিতাটিতে দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ü  অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে

ü  বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য

ü  অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না

ü  মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ৮++৬)

উদাহরণ-

তথা

জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক ∣∣ (৮+৬)

অগণ্য। দেখিলা রাজা নগর বাহিরে, ∣∣ (৮+৬)

রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ সিন্ধুতীরে যথা, ∣∣ (৮+৬)

নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা আকাশ-মণ্ডলে। ∣∣ (৮+৬)

(মেঘনাদবধকাব্য; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

এখানে কোন চরণের শেষেই অন্ত্যমিল নেই। আবার প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে (তথা জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য)। এই অন্ত্যমিল না থাকা এবং ভাবের বা বাক্যের প্রবহমানতাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।

গদ্যছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ü  মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম

ü  গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার জন্ম হয়

ü  পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না

ü  পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়; এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়

ü  গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়

ü  গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়

 


বাংলা শব্দ ভান্ডার

 


বাংলা শব্দ ভান্ডার

 

যে কোনো ভাষার প্রধান অবলম্বন তার শব্দ ভান্ডার। বাংলা ভাষা সংস্কৃত বা গ্রিক-এর মতো কোনো স্বাধীন স্বতন্ত্র ভাষা নয়। ভারতীয় ভাষার বিবর্তনের মধ্য দিয়ে এই ভাষার জন্ম। সুতরাং বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে বিভিন্ন ভাষার মিশ্রন আমরা দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরেই বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারকে আমরা তিনটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারি। ১. মৌলিক শব্দ ২. আগন্তুক  শব্দ  ৩. নব্যগঠিত শব্দ

 

প্রশ্নঃ মৌলিক শব্দ বলতে কী বোঝায়?

সংস্কৃত শব্দ থেকে যে শব্দ গুলি অবিকৃত বা বিকৃত হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দগুলি হল মৌলিক শব্দ। এই মৌলিক শব্দ আবার তিন প্রকার। ১. তৎসম শব্দ -  ২. অর্ধ তৎসম শব্দ -  ৩. তদ্ভব শব্দ।  

তৎসম শব্দঃ সংস্কৃত শব্দ থেকে যে শব্দ গুলি অবিকৃত বা অপরিবর্তিত হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দগুলি হল তৎসম শব্দ। যেমনঃ সূর্য , চন্দ্র , গ্রহ, লতা , গিরি , কর্ম , কীর্তন , বৈদ্য , বিষ্ণু প্রভৃতি।

অর্ধ তৎসম শব্দঃ সংস্কৃত শব্দ থেকে যে শব্দ গুলি ঈষৎ বা সামান্য পরিবর্তিত হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দগুলি হল অর্ধ তৎসম শব্দ। যেমনঃ

ক। বৃহস্পতি > বেস্পতি

খ। প্রসন্ন > পেসন্ন

গ। পুত্র > পুত্তুর

ঘ। বৈদ্য > বদ্যি

ঙ । রাত্রি > রাত্তির

তদ্ভব শব্দঃ সংস্কৃত শব্দ থেকে যে শব্দ গুলি ধবনি পরিবরতনের নিয়ম মেনে পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দগুলি হল তদ্ভব শব্দ। যেমনঃ মাটি , হাত , ওঝা , কানাই , কাঠ , সাঁঝ , কাজ প্রভৃতি শব্দ।

ক। মৃত্তিকা > মাটি

খ। হস্ত > হাত

গ। সন্ধ্যা > সাঁঝ

ঘ। বধু > বৌ

ঙ। কর্ম > কাজ

 

 

 

 

প্রশ্নঃ আগন্তুক শব্দ বলতে কী বোঝায়?

যে সব দেশি বা বিদেশি শব্দ সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দ গুলোকেই আগন্তুক শব্দ বলে। আগন্তুক শব্দ তিন প্রকার – ১. দেশি শব্দ  ২. বিদেশি শব্দ  ৩. প্রাদেশিক শব্দ

দেশি শব্দঃ দ্রাবিড় কিংবা অস্ট্রিক বা বাংলার প্রাচীন গোষ্ঠী সাঁওতাল শব্দ থেকে যে শব্দ সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দ গুলোকেই দেশি শব্দ বলে। যেমনঃ কালো , কুলো , খড় , ঢেঁকি , ডিঙি , নৌকা , পাঁঠা ইত্যাদি শব্দ।

বিদেশি শব্দঃ ভারতীয় শব্দ বাদে পাশ্চাত্যের যে সব শব্দ সরাসরি বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেই শব্দ গুলোকেই বিদেশি শব্দ বলে। যেমনঃ আজান , আদাব , হসপিটাল , স্কুল , কলেজ , চেয়ার ইত্যাদি,।

ইংরেজি শব্দঃ

স্কুল , কলেজ , কফি , টেবিল , চেয়ার , বুরুশ ইত্যাদি।

আরবি শব্দঃ

আক্কেল , আদাব , মর্জি , আল্লা, আসবাব, খতম, কাবাব, আসল , দাবি প্রভৃতি।

ফারসি শব্দঃ

আন্দাজ , কোমর , সাবাস , সিন্দুক , তাজা , দম প্রভৃতি।

তুর্কি শব্দঃ

কাঁচি , কাবু , চাকু , দারোগা , বাবা, বারুদ , প্রভৃতি।

পর্তুগিজ শব্দঃ

আলমারি , আনারস, চাবি , জানালা, সাবান , বোতাম প্রভৃতি শব্দ।

ফরাসি শব্দঃ

গ্যরাজ , কুপোন, রেস্তরাঁ , কাফে প্রভৃতি শব্দ।

ওলন্দাজ শব্দঃ

রুইতন , চিড়েতন ,  তুরুপ , তাস প্রভৃতি শব্দ।

প্রাদেশিক শব্দঃ ভারতের অন্য প্রদেশ থেকে যে শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে। যেমনঃ রুটি পুরি মিঠাই চুরুট  হরতাল প্রভৃতি শব্দ।

 

 

 

প্রশ্নঃ নব্য গঠিত শব্দ বা মিশ্র শব্দ বলতে কী বোঝায়?

দুটি ভিন্ন শ্রেণির শব্দ যখন মিশিয়ে জোড় শব্দ করে উচ্চারণ করা হয় তাকেই নব্য গঠিত শব্দ বা মিশ্র শব্দ বলে। যেমনঃ

ক। মাস্টার(ইং) + মশাই(তদ্ভব) = মাস্টার মশাই

খ। শাক(তৎসম) + সবজি(ফারসি) = শাকসবজি

গ। আইন(আরবি) + জীবি(তৎসম) = আইনজীবী






কপিরাইট ebanglaschools

পুনর্মুদ্রণ যোগ্য নয়। 

উপসর্গ

 


উপসর্গ

উপসর্গ কাকে বলে?

যে সকল ধ্বনিগুচ্ছ বা অব্যয় বাক্যে একা বসতে পারে না, কোনো শব্দের আগে বসে উচ্চারিত হয় সেই সকল ধবনিগুচ্ছ বা অব্যয়কে উপসর্গ বলে।

উপসর্গ সাধারণত তিন প্রকার-

১. সংস্কৃত উপসর্গ।  

২. বাংলা উপসর্গ।  

৩. বিদেশি উপসর্গ।



সংস্কৃত উপসর্গ

প্র

প্রমান , প্রগতি

পরা

পরাগত , পরাজয়

সম্

সম্মুখ , সম্মেলন

অনু

অনুমান , অনুচর

অব

অবরোধ , অবগাহন

নির্

নির্বাহ , নির্ণয়

দুর্

দুর্নীতি , দুঃসহ

অভি

অভিনয় , অভিকর্ষ

অধি

অধিবেশন , অধিপতি

সু

সুলভ , সুগঠিত

উদ্

উদিত , উদ্বৃত্ত

অতি

অতিক্রম , অতিরঞ্জন

নি

নিধান , নিগুঢ়

প্রতি

প্রতিপক্ষ , প্রতিবন্ধ

পরি

পরিক্রমা , পরিবেষণ

অপি

অপিনিহিতি

উপ

উপস্থিত , উপহার

আক্ষেপ , আগামী

বাংলা উপসর্গ

অকাজ , অজানা

অনা

অনামুখো , অনাবৃষ্টি

আকাল , আলুনি

কু

কুকাজ , কুকথা

নি

নিঝুম , নিখরচা

পাতি

পাতিলেবু , পাতিহাঁস

সঠিক , সজরে

হা

হাভাতে , হাপিত্যেস

আট

আটচালা , আটপৌঢ়ে

আড়

আড়চোখ , আড়কাঠি

ছিচ

ছিঁচকাঁদুনে 

পাশ

পাশবালিশ , পাশদুয়ার

মগ

মগডাল

নিত

নিতবর

রাম

রামছাগল , রামধোলাই

বিদেশি উপসর্গ

গর

গরহাজির , গরমিল

না

নাবালক , নাহোক

নিম

নিমরাজি , নিমগোছ

ফি

ফি বছর , ফি হপ্তা

বদ

বদলোক , বদমেজাজি

হর

হরতাল , হরতোন

হেড

হেডপণ্ডিত , হেডঅফিস

ডবল

ডবল পরোটা , ডবল মাসুল

হাফ

হাফহাতা , হাফশার্ট

দর

দরপত্তনি , দরদালান