উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩

 

 

উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাজেশন ২০২৩

অনধিক ১৫০ শব্দে প্রশ্নের উত্তর দাও। (প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫)

 

গল্প

মৃত্যুঞ্জয়ের বাড়ির অবস্থা শোচনীয়

দরদের চেয়ে ছোঁয়াচে কিছুই নেই এ জগতে

ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা

সেদিন আপিস যাওয়ার পথে প্রথম মৃত্যু দেখল

নিখিল ভেবেছিল বন্ধুকে বুঝিয়ে বলবে

দিন দিন কেমন হয়ে যেতে লাগল মৃত্যঞ্জয়

ভুরিভোজটা অন্যায়, না খেতে পেয়ে মরাটা উচিত নয় ভাই

এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত কী

 

কবিতা

রূপনারানের কূলেকবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ জীবন সায়াহ্নে উপনীত হয়ে যা উপলব্ধি করেছেন, তা সংক্ষেপে লেখো।

রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম” -কবির এই জেগে ওঠার তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ করে দিতে।বক্তা কে? মৃত্যুতে সকল দেনা বলতে কী বোঝানো হয়েছে? সে দেনা কীভাবে শোধ করতে চেয়েছিলেন কবি ?

সে কখনও করেনা বঞ্চনা- কে বঞ্চনা করে না? তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

 

নাটক

এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবেকে, কখন একথা বলেছে? এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বক্তা কী বোঝাতে চেয়েছেন?

আমাদের দিন ফুরিয়েছে” -কে কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ ব্যাখ্যা করো।

বিভাবনাটকটির নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।

মারাঠি তামাশায় দেখেছিলাম

অভাবের চিত্র বিভাব নাটকে কীভাবে প্রকাশিত হয়েছে?

এমনি সময় হটাত এক সাহেবের কথা পড়লামকোন সময়? কোন সাহেব? কী পড়েছিল?

 

আন্তর্জাতিক সাহিত্য

চোখের জলটা তাদের জন্য” -কাদের জন্য চোখের জল ? কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে চোখে জল এসেছিল?

সেই সন্ধ্যায় কোথায় গেল রাজমিস্ত্রিরা?” -রাজমিস্ত্রিরা কী নির্মাণ করেছিল? এই প্রশ্নের মাধ্যমে বক্তা কী বলতে চেয়েছেন?

গুরু নানকের হাতের ছাপ আজও লেগে রয়েছে।” -গুরু নানকের হাতের ছাপ কোথায় লেগে রয়েছে? এই প্রসঙ্গে বর্ণিত ঘটনাটি উল্লেখ করো।

গড়িয়া পড়া পাথর কীভাবে থামবে?”-পাথর গড়িয়ে পড়েছিল কেন? পাথর গড়ানোর দৃশ্য কে দেখেছিল? পাথর থামানোয় কী ঘটেছিল ?

গল্পটা আমাদের স্কুলে শোনানো হলো”-গল্পটা কী? স্কুলে গল্পটা শুনে লেখকের প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

 

ভাষাবিজ্ঞান

শব্দার্থ ধারা

উপাদানমূলক

থিসরাস

বাক্য গঠন

প্রত্যয়

রূপমূল

ধবনিমূল সহধবনি

গুচ্ছ ও যুক্ত ধ্বনি

 

শিল্প সাহিত্যের ইতিহাস

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর/যামিনী রায়/পট/ রামকিংকর বেইজ

জগদীশ চন্দ্র বসু/মেঘনাদ সাহা/কাদম্বিনী/সত্যেন্দ্রনাথ বসু

অতুলপ্রসাদ সেন/মান্না দে/বাউল গান

বাংলা চলচ্চিত্র ধারায় সত্যজিৎ রায়/মৃণাল সেন/ম্যাডান থিয়েটার

 

 

একেবারে পিছিয়ে থাকা ছেলেমেয়েদের জন্যে নূন্যতম একটা প্রশ্ন ছক দেওয়ার চেষ্টা করলাম। আশাকরি উপকৃত হবে।

দুটি জিনিস follow করলে অনায়াসেই ভালো নম্বর পেতে পারো।

১। টেক্সট খুব ভালো করে পড়ো; ২। গল্পগুলোকে মাথায় রাখার চেষ্টা করো; ৩। শর্ট প্রশ্নে ১০০% সফল হতে হবে ভেবেই পড়ো। প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারো।

সকল ছাত্র ছাত্রীকে জানাই আমার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

-প্রনয় স্যার

 

 

  

মঙ্গলকাব্য

মঙ্গল কাব্য

মঙ্গলকাব্যঃ আনুমানিক খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ভারতচন্দ্রের কাল পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে যে ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্য রচিত হয়েছিল তা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিত। ‘বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাস’-এর লেখক ডঃ আশুতোষ ভট্টাচার্য মঙ্গলকাব্য সম্পর্কে বলেছেন, “আনুমানিক খ্ৰীষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী হইতে আরম্ভ করিয়া অষ্টাদশ শতাব্দীর কবি ভারতচন্দ্রের কাল পর্যন্ত বঙ্গসাহিত্যে যে বিশেষ এক শ্রেণীর ধর্মবিষয়ক আখ্যানকাব্য প্রচলিত ছিল, তাহাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মঙ্গলকাব্য নামে পরিচিত

মঙ্গলকাব্যের গঠনঃ মঙ্গলকাব্য সাধারণত আটদিনে গাওয়া হয়; প্রত্যেক দিনের জন্য দিবাপালা এবং রাত্রি পালায় কাহিনি বিভক্ত হত। অর্থাৎ ষোলটি পালায় সমগ্র কাহিনির ভাগ করা হতো মঙ্গলকাব্যের সাধারণ রীতি। তবে আটদিনের এই বিভাগে গায়েনের সুবিধা অনুযায়ী মঙ্গল কাব্যের কাহিনি বিভাজন হতো। দিবা দ্বিপ্রহরের পর থেকে গান আরম্ভ করে সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত চলত তারপর সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পর আবার রাত্রি পালা আরম্ভ হতো এবং তা প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলত। মনসামঙ্গল প্রতিদিন এক পালা করে গাওয়া হতো এবং এক মাসের উপযোগী একেকটি সুদীর্ঘ পালার ত্রিশ পালায় বিভক্ত থাকতো। তবে সমস্ত মঙ্গলকাব্যেরই গান শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী রাত্রির পালাকে জাগরণ পালা বলা হয়। কারণ সেদিন সমস্ত রাত্রি জেগে গান হতো, পরদিন দিবা পালায় ফলশ্রুতি শোনার পর গান শেষ হয়ে যেত।

মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্যঃ

·         মঙ্গলকাব্যের একটি প্রধান উদ্দেশ্য দেবদেবীদের মাহাত্ম্য প্রচার করা।

·         মঙ্গল কাব্য দেবখন্ড ও নরখণ্ডে বিভক্ত।

·         মঙ্গলকাব্য তথা মধ্যযুগের কাব্যের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল নায়িকার বারোমাস্যার বর্ণনা।

·         প্রহেলিকা বা ধাঁধাঁ, প্রবাদ-প্রবচন, লোকবিশ্বাস, লোকশ্রুতি প্রভৃতি মঙ্গল কাব্যের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

মঙ্গল কাব্যের ছন্দঃ লৌকিক ছন্দ বা ছড়ার ছন্দের পাশাপাশি মঙ্গলকাব্যে ব্যাপকভাবে অক্ষরবৃত্ত পয়ার ছন্দই প্রধানত ব্যবহৃত হয়েছে। যে পয়ার ছন্দ মঙ্গলকাব্যে ব্যবহৃত হয়েছে তাকে লঘু বা দ্বিপদী পয়ার বলে উল্লেখ করা যায়। প্রতিটি পদ আট এবং ছয় মাত্রায় বিভক্ত। পয়ার বা পাঁচালী ছন্দের পর মঙ্গলকাব্যে আর যে সকল ছন্দ ব্যবহৃত হয়েছে তাদের মধ্যে ত্রিপদী ছন্দ অন্যতম। অনেক সময় ত্রিপদী ছন্দকে মঙ্গলকাব্যের কবিগন লাচাড়ী বলে উল্লেখ করেছেন।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শাখা হল মঙ্গলকাব্য। বিভিন্ন দেবদেবীকে নিয়ে মঙ্গলকাব্য রচিত হলেও বাংলা মঙ্গলকাব্যের প্রধান ধারা তিনটি - ১) মনসামঙ্গল, ২) চণ্ডীমঙ্গল, ৩) ধর্মমঙ্গল

বিষয়গত দিক দিয়ে মঙ্গলকাব্যকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। ১। পৌরাণিক মঙ্গলকাব্য ২। লৌকিক মঙ্গলকাব্য।

পৌরাণিক মঙ্গলকাব্য: গৌরী মঙ্গল, ভবানী মঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কমলা মঙ্গল, গঙ্গা মঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ইত্যাদি।

লৌকিক মঙ্গলকাব্য: শিবায়ন বা শিবমঙ্গল মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর, শীতলা মঙ্গল, রায়মঙ্গল, ষষ্ঠী মঙ্গল, সারদামঙ্গল, সূর্যমঙ্গল।


মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা পরীক্ষা

উচ্চ-মাধ্যমিক বাংলা প্রস্তুতি
যারা উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে তাদের জন্য প্রনয় স্যারের সহায়তায় তোমাদের জন্য একটি MCQ মক টেস্টের আয়োজন করা হয়েছে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। আশাকরি তোমাদের এই ছোট্ট ছোট্ট পরীক্ষায় উপকার হবে। পরীক্ষা দিতে নীচের লিঙ্ক-এ ক্লিক করো। 
HS MCQ SET 1

HS MCQ SET 2

HS MCQ SET 3

HS MCQ SET 4

HS MCQ SET 5


বাংলা ছন্দ


ছন্দ



ছন্দ কাকে বলব ?

'ছন্দ' হল শ্রুতিমধুর শব্দের শিল্পময় বিন্যাস, যা কানে জাগায় ধ্বনি ও সুষমা চিত্তে জায়গায় রস। পদ্য রচনার বিশেষ রীতি । তা কাব্যের প্রধান বাহন। গদ্যেও ছন্দ থাকতে পারে, তবে পদ্যেই তার সুস্পষ্ট প্রকাশ। ছন্দ তাই 'শিল্পিত বাক্যরীতি'।




ছন্দোবদ্ধ কাব্য সবারই পড়তে ভাল লাগে। যেমন-

" হা-ট্টিমা টিম টিম,
তারা মাঠে পাড়ে ডিম,
তাদের খাড়া দুটো শিং,
তারা হা-ট্টিমা টিম টিম। "

এখানে ছন্দের দোলা সব পাঠক মনকে দুলিয়ে দেয়। সুতরাং ছন্দে থাকবে-

১। শ্রুতিমধুর শব্দ ।
২। শব্দ সাজানোর কৌশল 
৩। চিত্তে জাগাবে রস
৪। কানে জাগবে ধ্বনি কল্লোল



ছন্দ শিখতে গেলে আগে কয়েকটি জিনিস আমাদের বুঝে নিতে হবে-
➤ দল

দল বলতে বোঝায় বাগ যন্ত্রের সবচেয়ে কম চেষ্টায় উচ্চারিত ধ্বনি সমষ্টি।
দল দুই প্রকার
১। মুক্ত দল
২। রুদ্ধদল


মুক্ত দল: অক্ষর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসের গতিপথ মুক্ত হলে মুক্ত দল।
যেমন- মমতা
ম- ম- তা
ম+অ
ম+অ
ত+আ

রুদ্ধ দল: অক্ষর উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাসের গতিপথ রুদ্ধ হলে রুদ্ধ দল।
যেমন- যৌবন
যৌ - বন
যো+উ
ব+অ
ন্


মাত্রা বা কলা

মাত্রা বা কলা: একটি অক্ষর উচ্চারণ করতে যে সময় লাগে সেই সময় কে বলা হয় মাত্রা বা কলা।

যেমন- আমি

যেমন এই “আমি” উচ্চারণে যেটুকু সময় লাগছে তাই হল মাত্রা বা কলা।


ছেদ ও যতি

ছেদ ও যতি: বাক্যের আংশিক অর্থ প্রকাশ এর জন্য ধ্বনি প্রবাহে যে উচ্চারণ বিরতি ঘটে তাকে ছেদ ও যতি বলে।
যেমন - তুমি সেখানে যেওনা, গেলে ক্ষতি হবে।
এখানে ( , ) টা ছেদ ও যতি।



বাংলা ছন্দের প্রকারভেদ

বাংলা কবিতার ছন্দ মূলত ৩ প্রকার- ১। স্বরবৃত্ত, ২। মাত্রাবৃত্ত ৩। অক্ষরবৃত্ত । তবে আধুনিক কবিতায় গদ্যছন্দের প্রাধ্যান্যদেখা যায়

স্বরবৃত্ত ছন্দ :  সহজ কথায় যে ছন্দকে তাল ও লয় সহযোগে পড়া যায় , সেই সকল ছন্দকে স্বরবৃত্ত ছন্দ বলে। ছড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয় বলে, এই ছন্দকে ছড়ার ছন্দও বলা হয়।

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব সবসময় ৪ মাত্রার হয়

ü  প্রতি পর্বের প্রথম অক্ষরে শ্বাসাঘাত পড়ে

ü  সব দল ১ মাত্রা হয়ে থাকে।

ü  দ্রুত লয় থাকে, মানে কবিতা আবৃত্তি করার সময় দ্রুত পড়া হয়

উদাহরণ-

বাঁশ বা-গা-নের  মা-থার উ-পর  চাঁদ উ-ঠে-ছে  ওই ∣∣ (৪+৪+৪+১)

মা-গো আ-মার  শো-লোক ব-লা  কা-লা দি-দি  কই ∣∣ (৪+৪+৪+১)

মাত্রাবৃত্ত ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব ৪,৫,৬ বা ৭ মাত্রার হয়

ü  অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়; আর অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে (য় থাকলেও) ২ মাত্রা গুনতে হয়; য় থাকলে, যেমন- হয়, কয়; য়-কে বলা যায় semi-vowel, পুরো স্বরধ্বনি নয়, তাই এটি অক্ষরের শেষে থাকলে মাত্রা ২ হয়

ü  কবিতা আবৃত্তির গতি স্বরবৃত্ত ছন্দের চেয়ে ধীর, কিন্তু অক্ষরবৃত্তের চেয়ে দ্রুত হয়ে থাকে।

উদাহরণ-

এইখানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের  তলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের  জলে ∣∣ (৬+৬+৬+২)

বিশ্লেষণঃ কবিতাটির মূল পর্ব ৬ মাত্রার। প্রতি চরণে তিনটি ৬ মাত্রার পূর্ণ পর্ব এবং একটি ২ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব আছে।

এখন মাত্রা গণনা করলে দেখা যাচ্ছে, প্রথম চরণের-

প্রথম পর্ব- এইখানে তোর; এ+ই+খা+নে = ৪ মাত্রা (প্রতিটি অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); তোর = ২ মাত্রা (অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় ২ মাত্রা)

দ্বিতীয় পর্ব- দাদির কবর; দা+দির = ১+২ = ৩ মাত্রা; ক+বর = ১+২ = ৩ মাত্রা

তৃতীয় পর্ব- ডালিম-গাছের; ডা+লিম = ১+২ = ৩ মাত্রা; গা+ছের = ১+২ = ৩ মাত্রা

চতুর্থ পর্ব- তলে; ত+লে = ১+১ = ২ মাত্রা

অক্ষরবৃত্ত ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  মূল পর্ব ৮ বা ১০ মাত্রার হয়

ü  অক্ষরের শেষে স্বরধ্বনি থাকলে ১ মাত্রা গুনতে হয়

ü  অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, এমন অক্ষর শব্দের শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়; শব্দের শুরুতে বা মাঝে থাকলে ১ মাত্রা হয়

ü  কোন শব্দ এক অক্ষরের হলে, এবং সেই অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে, সেই অক্ষরটির মাত্রা ২ হয়

ü  কোন সমাসবদ্ধ পদের শুরুতে যদি এমন অক্ষর থাকে, যার শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি আছে, তবে সেই অক্ষরের মাত্রা ১ বা ২ হতে পারে

ü  কবিতা আবৃত্তির গতি ধীর হয়

উদাহরণ-

হে কবি, নীরব কেন ফাগুন যে এসেছে ধরায় ∣∣ (৮+১০)

বসন্তে বরিয়া তুমি লবে না কি তব বন্দনায় ∣∣ (৮+১০)

কহিল সে স্নিগ্ধ আঁখি তুলি- ∣∣ (১০)

দক্ষিণ দুয়ার গেছে খুলি? ∣∣ (১০)

(তাহারেই পড়ে মনে; সুফিয়া কামাল)

কবিতাটির মূল পর্ব ৮ ও ১০ মাত্রার। স্তবক দুইটি পর্বের হলেও এক পর্বেরও স্তবক আছে।

এখন, মাত্রা গণনা করলে দেখা যায়, প্রথম চরণের,

প্রথম পর্ব- হে কবি, নীরব কেন; হে কবি- হে+ক+বি = ৩ মাত্রা (তিনটি অক্ষরের প্রতিটির শেষে স্বরধ্বনি থাকায় প্রতিটি ১ মাত্রা); নীরব- নী+রব = ১+২ = ৩ মাত্রা (শব্দের শেষের অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকায় সেটি ২ মাত্রা); কেন- কে+ন = ১+১ = ২ মাত্রা; মোট ৮ মাত্রা

আবার দ্বিতীয় চরণের,

দ্বিতীয় পর্ব- লবে না কি তব বন্দনায়; লবে- ল+বে = ২ মাত্রা; না কি তব = না+কি+ত+ব = ৪ মাত্রা; বন্দনায়- বন+দ+নায় = ১+১+২ = ৪ মাত্রা (বন- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকলেও অক্ষরটি শব্দের শেষে না থাকায় এর মাত্রা ১ হবে; আবার নায়- অক্ষরের শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি- য় থাকায়, এবং অক্ষরটি শব্দের শেষে থাকায় এর মাত্রা হবে ২); মোট ১০ মাত্রা

এরকম-

আসি তবে ধন্যবাদ ∣∣ (৪+৪)

না না সে কি, প্রচুর খেয়েছি ∣∣ (৪+৬)

আপ্যায়ন সমাদর যতটা পেয়েছি ∣∣ (৮+৬)

ধারণাই ছিলো না আমার- ∣∣ (১০)

ধন্যবাদ। ∣∣ (৪)

(ধন্যবাদ; আহসান হাবীব)

অক্ষরবৃত্ত ছন্দের রূপভেদ বা প্রকারভেদ : অক্ষরবৃত্ত ছন্দের আবার অনেকগুলো রূপভেদ বা প্রকার আছে- পয়ার, মহাপয়ার, ত্রিপদী, চৌপদী, দিগক্ষরা, একাবলী, সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দ। নিচে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হল-

সনেট :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ü  বাংলায় উল্লেখযোগ্য সনেট রচয়িতা- মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, প্রমথ চৌধুরী, মোহিতলাল মজুমদার, অক্ষয়কুমার বড়াল, ফররুখ আহমদ,কামিনী রায়, প্রমুখ

ü  ১৪ বা ১৮ মাত্রার চরণ হয়

ü  দুই স্তবকে ১৪টি চরণ থাকে

ü  সাধারণত দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮টি ও ৬টি চরণ থাকে (চরণ বিন্যাসে ব্যতিক্রম থাকতে পারে)

ü  প্রথম আটটি চরণের স্তবককে অষ্টক ও শেষ ৬টি চরণের স্তবককে ষস্টক বলে

ü  এছাড়া সনেটের অন্ত্যমিল ও ভাবের মিল আছে এমন চারটি চরণকে একত্রে চৌপদী, তিনটি পদকে ত্রিপদীকা বলে

ü  নির্দিষ্ট নিয়মে অন্ত্যমিল থাকে

ü  দুইটি স্তবকে যথাক্রমে ভাবের বিকাশ ও পরিণতি থাকতে হয়; ব্যাপারটাকে সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে তা অনেকটা এভাবে বলা যায়- প্রথম স্তবকে কোন সমস্যা বা ভাবের কথা বলা হয়, আর দ্বিতীয় স্তবকে সেই সমস্যার সমাধান বা পরিণতি বর্ণনা করা হয়

ü  সনেটের ভাষা মার্জিত এবং ভাব গভীর ও গম্ভীর হতে হয়

ü  সনেট মূলত ৩ প্রকার- পেত্রার্কীয় সনেট, শেক্সপীয়রীয় সনেট ও ফরাসি সনেট; এই ৩ রীতির সনেটের প্রধান পার্থক্য অন্ত্যমিলে।

এছাড়া ভাব, বিষয় ও স্তবকের বিভাজনেও কিছু পার্থক্য আছে (তা ব্যাকরণের ছন্দ প্রকরণের আলোচ্য নয়)। নিচে ৩ প্রকার সনেটের অন্ত্যমিলের পার্থক্য দেখান হল-

পেত্রার্কীয় রীতি

ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক

চ+ছ+জ চ+ছ+জ

শেক্সপীয়রীয় রীতি

ক+খ+ক+খ

গ+ঘ+গ+ঘ

চ+ছ+চ+ছ

জ+জ

ফরাসি রীতি

ক+খ+খ+ক ক+খ+খ+ক

গ+গ চ+ছ+চ+ছ

উদাহরণ-

হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;- ∣∣ (৮+৬) ক

তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি, ∣∣ (৮+৬) খ

পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ ∣∣ (৮+৬) ক

পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি। ∣∣ (৮+৬) খ অষ্টক

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি। ∣∣ (৮+৬) খ

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ, ∣∣ (৮+৬) ক

মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;- ∣∣ (৮+৬) খ

কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন। ∣∣ (৮+৬) ক

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে,- ∣∣ (৮+৬) গ

ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি ∣∣, (৮+৬) ঘ

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি? ∣∣ (৮+৬) ঘ ষটক

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে। ∣∣ (৮+৬) গ

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে ∣∣ (৮+৬) ঙ

মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালে । ∣∣। (৮+৬) ঙ

(বঙ্গভাষা; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

কবিতাটিতে দুই স্তবকে যথাক্রমে ৮ ও ৬ চরণ নিয়ে মোট ১৪টি চরণ আছে। প্রতিটি চরণে ৮ ও ৬ মাত্রার দুই পর্ব মিলে মোট ১৪ মাত্রা আছে।

অমিত্রাক্ষর ছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  বাংলা ভাষায় অমিত্রাক্ষর ছন্দ প্রবর্তন করেন- মাইকেল মধুসূদন দত্ত

ü  অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান বৈশিষ্ট্য ভাবের প্রবহমানতা; অর্থাৎ, এই ছন্দে ভাব চরণ-অনুসারী নয়, কবিকে একটি চরণে একটি নির্দিষ্ট ভাব প্রকাশ করতেই হবে- তা নয়, বরং ভাব এক চরণ থেকে আরেক চরণে প্রবহমান এবং চরণের মাঝেও বাক্য শেষ হতে পারে

ü  বিরামচিহ্নের স্বাধীনতা বা যেখানে যেই বিরামচিহ্ন প্রয়োজন, তা ব্যবহার করা এই ছন্দের একটি বৈশিষ্ট্য

ü  অমিত্রাক্ষর ছন্দে অন্ত্যমিল থাকে না, বা চরণের শেষে কোন মিত্রাক্ষর বা মিল থাকে না

ü  মিল না থাকলেও এই ছন্দে প্রতি চরণে মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ১৪) এবং পর্বেও মাত্রা সংখ্যা নির্দিষ্ট (সাধারণত ৮++৬)

উদাহরণ-

তথা

জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক ∣∣ (৮+৬)

অগণ্য। দেখিলা রাজা নগর বাহিরে, ∣∣ (৮+৬)

রিপুবৃন্দ, বালিবৃন্দ সিন্ধুতীরে যথা, ∣∣ (৮+৬)

নক্ষত্র-মণ্ডল কিংবা আকাশ-মণ্ডলে। ∣∣ (৮+৬)

(মেঘনাদবধকাব্য; মাইকেল মধুসূদন দত্ত)

এখানে কোন চরণের শেষেই অন্ত্যমিল নেই। আবার প্রথম বাক্যটি চরণের শেষে সমাপ্ত না হয়ে প্রবাহিত হয়ে একটি চরণের শুরুতেই সমাপ্ত হয়েছে (তথা জাগে রথ, রথী, গজ, অশ্ব, পদাতিক অগণ্য)। এই অন্ত্যমিল না থাকা এবং ভাবের বা বাক্যের প্রবহমানতাই অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রধান দুইটি বৈশিষ্ট্য।

গদ্যছন্দ :

বৈশিষ্ট্যঃ

ü  এই ছন্দে বাংলায় প্রথম যারা কবিতা লিখেছিলেন তাদের অন্যতম- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ü  মূলত ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী শিল্পমুক্তির আন্দোলনের ফসল হিসেবে এর জন্ম

ü  গদ্য ছন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- গদ্যের মধ্যে যখন পদ্যের রঙ ধরানো হয় তখন গদ্যকবিতার জন্ম হয়

ü  পর্বগুলো নানা মাত্রার হয়, সাধারণত পর্ব-দৈর্ঘ্যে কোন ধরনের সমতা বা মিল থাকে না

ü  পদ ও চরণ যতি দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয়; এই বিরাম চিহ্ন বা ছেদ চিহ্ন উচ্চারণের সুবিধার্থে নয়, বরং অর্থ প্রকাশের সুবিধার্থে ব্যবহৃত হয়

ü  গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও তা পড়ার সময় এক ধরনের ছন্দ বা সুরের আভাস পাওয়া যায়

ü  গদ্যকবিতা গদ্যে লেখা হলেও এর পদবিন্যাস কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও পুনর্বিন্যাসিত হতে হয়