ব‌ই-ট‌ই - প্রেমেন্দ্র মিত্র



ব‌ই-ট‌ই
প্রেমেন্দ্র মিত্র


ব‌ই তো পড়ো, ট‌ই পড়ো কি?
তাই তো কাটি ছড়া।
ব‌ই পড়া সব মিছে-ই যদি
না হল ট‌ই পড়া।

ট‌ই পড়া যায় পড়তে কোথায়?
বলছি তবে শোনো।
ব‌ই-এর মাঝে লুকিয়ে থাকে
ট‌ই সে কোনও কোনও।

আর পাবে ট‌ই সকালবেলা
ব‌ই থেকে মুখ তুলে
হঠাৎ যদি বাইরে চেয়ে
মনটা ওঠে দুলে।

ট‌ই থাকে সব রোদ- মাখানো
গাছের ডালে পাতায়,
ট‌ই থাকে সেই আকাশ- ছোঁয়া
খোলা মাঠের খাতায়।

ট‌ই চমকায় বিজলি হয়ে
আঁধার- করা মেঘে,
খ‌ই হয়ে ট‌ই ফোটে দিঘির
জলে বৃষ্টি লেগে।

ট‌ই কাঁপে সব ছোট্ট পাখির
রংবেরঙের পাখায়
খোকা- খুকুর মুখে আবার
মিষ্টি হাসি মাখায়।

ব‌ই পড়ো খুব, যত পার,
সঙ্গে পড়ো ট‌ই।
ট‌ই ন‌ইলে থাকত কোথায়
এতরকম ব‌ই।।


জাতের বজ্জাতি - কাজী নজরুল ইসলাম




জাতের বজ্জাতি 
 কাজী নজরুল ইসলাম 

জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াত খেলছে জুয়া
ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয় তো মোয়া॥
হুঁকোর জল আর ভাতের হাঁড়ি, ভাবলি এতেই জাতির জান,
তাই তো বেকুব, করলি তোরা এক জাতিকে একশো-খান!
এখন দেখিস ভারত-জোড়া
পচে আছিস বাসি মড়া,
মানুষ নাই আজ, আছে শুধু জাত-শেয়ালের হুক্কাহুয়া॥


জানিস না কি ধর্ম সে যে বর্মসম সহনশীল,
তাকে কি ভাই ভাঙতে পারে ছোঁয়া-ছুঁয়ির ছোট্ট ঢিল।
যে জাত-ধর্ম ঠুনকো এত,
আজ নয় কাল ভাঙবে সে তো,
যাক না সে জাত জাহান্নামে, রইবে মানুষ, নাই পরোয়া॥

(সংক্ষেপিত)

আছেন কোথায় স্বর্গপুরে - লালন ফকির


আছেন কোথায় স্বর্গপুরে
লালন ফকির 

আছেন কোথায় স্বর্গপুরে কেউ নাহি তার ভেদ জানে।
কেন জিজ্ঞাসিলে খোদার কথা দেখায় আশমানে।।

পৃথিবী গোলাকার শুনি
      অহর্নিশি ঘোরে আপনি।
তাইতে হয় দিন-রজনী
      জ্ঞানী গুনী তাই মানে।।

একদিকেতে নিশি হলে
     অন্যদিকে দিবা বলে।
আকাশতো দেখে সকলে
     খোদা দেখে কয়জনে।।

আপন ঘরে কে কথা কয়
    না জেনে আসমানে তাকায়।
লালন বলে কেবা কোথায়
   বুঝিবে দিব্যজ্ঞানে।।

আঁকা লেখা - মৃদুল দাশগুপ্ত

আঁকা লেখা 
মৃদুল দাশগুপ্ত 

রঙ ছড়িয়ে খুশ খেয়ালে আমি যখন চিত্র আঁকি
তিনটি শালিক ঝগড়া থামায়, অবাক তাকায় চড়ুই পাখি
মৎস্য ভুলে মাছরাঙা তার নীল রঙটি ধার দিতে চায়
প্রজাপতির ঝাঁক চাইছে  তাদের রাখি আমার আঁকায়
গর্ত থেকে ইদুর, সেটাও পিটপিটে চোখ দেখছে চেয়ে
রঙ তুলিরা বেজায় খুশি আজ দুপুরে আমায় পেয়ে!

ওই যে মাঠে চাঁদের দুধের সর জমে যায় যখন পুরু
বাতাস ঈষৎ কাঁপন দিতেই আমার ছড়া লেখার শুরু
এবার যেন তারার মালা খুব গোপনে নামছে কাছে
'অ' লিখছে 'আ' লিখছে দশ জোনাকি বকুল গাছে
এই ছড়াতেই আজ আমাকে তোমার কাছে আনলো হাওয়া
সেই তো আমার পরম পুলক, সেই তো আমার পদক পাওয়া !

সমাস


সমাস

সংজ্ঞাঃ শব্দকে সুন্দর করে বলবার জন্য পরস্পর অর্থ সম্বন্ধযুক্ত দুই বা ততোধিক শব্দকে একপদে পরিনত করার রীতি সমাস।

সমাস মূলত ৮ প্রকার-

  1. দ্বন্দ্ব সমাস
  2. দ্বিগু সমাস
  3. তৎপুরুষ সমাস
  4. বহুব্রীহি সমাস
  5. কর্মধারায় সমাস
  6. অলোপ সমাস
  7. নিত্য সমাস
  8. বাক্যাশ্রয়ী সমাস




দ্বন্দ্ব সমাস - যে সমাসে দুই বা ততোধিক অর্থ সম্বন্ধযুক্ত সমস্যমান পদ সংযোজক অব্যয় দ্বারা যুক্ত হয়ে সমস্তপদে পরিনত হয় এবং সমস্তপদে সমস্যমান প্রতিটি পদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে।
যেমন-
আসে ও যায় - আসে যায়
রবি ও শশী - রবিশশী

দ্বিগু সমাস - যে তৎপুরুষ জাতীয় সমাসের পূর্বপদ সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে বিশেষ্য জাতীয় উত্তরপদের সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে। দ্বিগু সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষ্য হয়। 
যেমন-
চার মাথার সমাহার - চৌমাথা
সে ( তিন) তারের সমাহার - সেতার

তৎপুরুষ সমাস - যে সমাসে পূর্বপদের কর্ম - করণ - অপাদান ইত্যাদি কারকের বিভক্তি চিহ্ন কিংবা অনুসর্গের লোপ হয় , এবং পরপদের প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় , তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। 
যেমন-
রথকে দেখা - রথ দেখা
দেবকে আশ্রিত - দেবাশ্রিত
.শ্রী দ্বারা যুক্ত - শ্রীযুক্ত
বিয়ের জন্য পাগলা - বিয়ে পাগলা
স্নাতক হতে উত্তর - স্নাতকোত্তর
মৌ এর চাক - মৌচাক
পথে চলা - পথ চলা
নয় সভ্য - অসভ্য
পঙ্কে জন্মে যা - পঙ্কজ
চিরকাল ব্যাপী সুখী - চিরসুখী
দৃঢ় ভাবে বদ্ধ - দৃঢ়বদ্ধ
প্রকৃষ্ট রূপে ভাত - প্রভাত

বহুব্রীহি সমাস -  যে সমাসে সমস্যমান পদ গুলির মধ্যে কোনো পদেরই অর্থ বিশেষ ভাবে প্রাধান্য পায় না অথচ উভয়পদ সম্মিলিত ভাবে তৃতীয় কোনো বস্তুকে প্রকাশ করে, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। 
যেমন-
পানিতে জন্মেছে যে ফল - পানিফল
কানে কানে যে কথা - কানাকানি
স্ত্রীর সঙ্গে বর্তমান - সস্ত্রীক 
নাই পদার্থ যার - অপদার্থ 
এক চোখ যার - একচোখা
দশ আনন যার - দশানন

কর্মধারয় সমাস -   বিশেষণ  বিশেষণ পদে কিংবা বিশেষ  বিশেষণ পদে যে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় তাকে কর্মধারয় সমাস বলা হয় 
যেমন-
যিনি দেব তিনই ঋষি - দেবর্ষি
প্রানী বিষয়ক বিদ্যা - প্রানীবিদ্যা
বাবু ফুলের মত - ফুলবাবু
কাজলের মত কালো - কাজলকালো


অলোপ সমাস - যে সমাসে সমস্তপদে পূর্ব পদের বিভক্তি লোপ পায় না তাকে অলোপ সমাস বলে ।
যেমন-
হাটে ও ঘাটে - হাটে ঘাটে
তেলে ও বেগুনে - তেলে বেগুনে

নিত্য সমাসযে সমাসে সমস্যমান পদ গুলি নিত্য বা সবসময় এক রকম থাকে তাকে নিত্য সমাস বলে। 
যেমন-
অন্য মত - মতান্তর
অন্য পাঠ - পাঠান্তর
অন্য দেশ - দেশান্তর

বাক্যাশ্রয়ী সমাস - কখনো কখনো একটি সম্পূর্ণ বাক্য সমাসের মত ব্যবহৃত হয় । যাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। 
যেমন- 
বসে আঁকো প্রতিযোগিতা










অনুশীলনী
সমাস নির্ণয় করোঃ-

  1. খে-চর
  2. গড়ের মাঠ
  3. হতভাগা
  4. আসমুদ্র
  5. হাতছানি
  6. কালবৈশাখী
  7. হাতাহাতি
  8. বিমাতা
  9. নিমরাজি
  10. আধময়লা
  11. জলে চড়ে যে
  12. পেশ করে যে
  13. রাজ্য পালন করেন যিনি
  14. অমৃতের ন্যায় মধুর
  15. ধ্বনির সদৃশ
  16. হাতে কলমে
  17. তেপান্তর
  18. লোক লজ্জা
  19. পাতে পড়া
  20. ঘানির তেল
  21. দু- পন
  22. অচিন্ত্য
  23. অনর্থক
  24. সোজাসুজি
  25. বইটই
  26. গানবাজনা
  27. অনুতাপ
  28. সত্যবাদী
  29. পারিজাত
  30. চা -গরম


form

ebanglaschools

First name:

Last name:



মাধ্যমিক ২০২০ - প্রশ্নপত্র ২


ebanglaschools
Madhyamik 
Mock test 2
Full Marks - 25    Time: 50 munites
[ হাতের লেখা পরিস্কার বাঞ্ছনীয়। বানান ভূল হলে নম্বর কাটা যাবে ]

১। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।    ৫ x ১
ক। দোয়াত কলম কত প্রকারের হয়?
খ। আফ্রিকা কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
গ। দিগম্বরের জটায় কে হাসে?
ঘ। “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই” –জহুরি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
ঙ। অলোপ দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে?

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ২ x ৫
ক। অভিষেক কবিতা অবলম্বনে রাবণ চরিত্র আলোচনা করো।
খ। বিস্ফোরণ। কলম বিস্ফোরণ।”- কলমের বিস্ফোরণ বলতে লেখক কি বুঝিয়েছেন?

৩।
 নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ১ x ৫
ক। প্রবল বৃষ্টিতে বানভাসি মেদিনীপুর এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

৪।
 নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ৫ x
ক।
মামার বাড়িতে এসেছে তপন। ( কারক ও বিভক্তি )
খ। ছেলেটা এখনও পেমেন্টের জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ( কারক ও বিভক্তি )
গ। সে আজকে বিরিয়ানি খাবে। ( ন-ঞরথক বাক্যে রূপান্তর )
ঘ। তুমি আজকে সাদা কালো জামাটা পড়ে আসবে । ( সমাস নির্ণয় )
ঙ। রাজপথে আজ সাইকেল চলছে। ( সমাস নির্ণয় )
***
This questions in PDF format

বি.দ্র- অসদ উপায় অবলম্বন না করে যথাযথ ভাবে উত্তর পত্র তৈরী করে গৃহশিক্ষক কে দেখিয়ে তোমার বর্তমান স্থান সম্পর্কে সচেতন হও। 

উচ্চ মাধ্যমিক ২০২০ প্রশ্নপত্র ২

ebanglaschools
Mock test 2
Higher Secondary
Full Marks - 25    Time: 50ৃ munites
[ হাতের লেখা পরিস্কার বাঞ্ছনীয়। বানান ভূল হলে নম্বর কাটা যাবে ]

১। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।    ৫ x ১
ক। ' রাতে রাতে কাজ সারতে হবে'- কোন কাজ সারার কথা বলা হয়েছে?
খ। পউষে বাদলা সম্পর্কে ডাক পুরুষের বচন কি?
গ। ' সে রীতিমত কাবু হয়ে পড়েছে - কে কি ভাবে কাবু হয়ে পড়েছে?
ঘ। 'ঘুরে ফিরে ঘরে আসে ' কার কথা বলা হয়েছে?
ঙ। তুলনামূলক ভাষাবিজ্ঞান কি?

২। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ২ x ৫ ( আন্তর্জাতিক গল্প ও কবিতা )
ক। কত সব খবর কত সব প্রশ্ন - কবিতায় উল্লেখিত খবর ও প্রশ্ন গুলি উল্লেখ করো। 
খ। গল্পটা আমাদের স্কুলে শোনানো হতো -গল্পটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। 


৩। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ১ x ৫ (আমার বাংলা)

ক। পচিশ ত্রিশ বছর আগের কথা- কোন কথা? কথাটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

৪। নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও।  ৫ x ২


ক। শব্দার্থ পরিবর্তনের মূল কারণ আলোচনা করো।

খ। বাংলা চিত্রকলায় নন্দলাল বসুর অবদান আলোচনা করো। 
***
This questions in PDF format
বি.দ্র- অসদ উপায় অবলম্বন না করে যথাযথ ভাবে উত্তর পত্র তৈরী করে গৃহশিক্ষক কে দেখিয়ে তোমার বর্তমান স্থান সম্পর্কে সচেতন হও। 

চিন্তাশীল - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


চিন্তাশীল


প্রথম দৃশ্য
 নরহরি চিন্তায় নিমগ্ন। ভাত শুকাইতেছে। মা মাছি তাড়াইতেছেন

মা। অত ভেবো না, মাথার ব্যামো হবে বাছা!

নরহরি। আচ্ছা মা, ‘ বাছা ' শব্দের ধাতু কী বলো দেখি।

মা। কী জানি বাপু!

নরহরি। ‘ বৎ স '। আজ তুমি বলছ ‘ বাছা ' — দু-হাজার বৎ সর আগে বলত ‘ বৎ স ' — এই কথাটা একবার ভালো করে ভেবে দেখো দেখি মা! কথাটা বড়ো সামান্য নয়। এ কথা যতই ভাববে ততই ভাবনার শেষ হবে না।

পুনরায় চিন্তায় মগ্ন

মা। যে ভাবনা শেষ হয় না এমন ভাবনার দরকার কী বাপ! ভাবনা তো তোর চিরকাল থাকবে, ভাত যে শুকোয়। লক্ষী আমার, একবার ওঠ্‌।

নরহরি। ( চমকিয়া) কী বললে মা? লক্ষ্মী? কী আশ্চর্য! এক কালে লক্ষ্মী বলতে দেবী-বিশেষকে বোঝাত। পরে লক্ষ্মীর গুণ অনুসারে সুশীলা স্ত্রীলোককে লক্ষ্মী বলত, কালক্রমে দেখো পুরুষের প্রতিও লক্ষ্মী শব্দের প্রয়োগ হচ্ছে! একবার ভেবে দেখো মা, আস্তে আস্তে ভাষার কেমন পরিবর্তন হয়! ভাবলে আশ্চর্য হতে হবে।

ভাবনায় দ্বিতীয় ডুব

মা। আমার আর কি কোনো ভাবনা নেই নরু? আচ্ছা, তুই তো এত ভাবিস, তুইই বল্‌ দেখি উপস্থিত কাজ উপস্থিত ভাবনা ছেড়ে কি এই-সব বাজে ভাবনা নিয়ে থাকা ভালো? সকল ভাবনারই তো সময় আছে।

নরহরি। এ কথাটা বড়ো গুরুতর মা! আমি হঠাৎ এর উত্তর দিতে পারব না। এটা কিছুদিন ভাবতে হবে, ভেবে পরে বলব।

মা। আমি যে কথাই বলি তোর ভাবনা তাতে কেবল বেড়েই ওঠে, কিছুতেই আর কমে না। কাজ নেই বাপু, আমি আর-কাউকে পাঠিয়ে দিই।

[ প্রস্থান ]

মাসিমা। ছি নরু, তুই কি পাগল হলি? ছেঁড়া চাদর, একমুখ দাড়ি — সমুখে ভাত নিয়ে ভাবনা! সুবলের মা তোকে দেখে হেসেই কুরুক্ষেত্র!

নরহরি। কুরুক্ষেত্র! আমাদের আর্যগৌরবের শ্মাশানক্ষেত্র! মনে পড়লে কি শরীর লোমাঞ্চিত হয় না! অন্তঃকরণ অধীর হয়ে ওঠে না! আহা, কত কথা মনে পড়ে! কত ভাবনাই জেগে ওঠে! বলো কী মাসি! হেসেই কুরুক্ষেত্র! তার চেয়ে বলো-না কেন কেঁদেই কুরুক্ষেত্র!

অশ্রুনিপাত

মাসিমা। ওমা, এ যে কাঁদতে বসল! আমাদের কথা শুনলেই এর শোক উপস্থিত হয়। কাজ নেই বাপু!

[ প্রস্থান]
দিদিমার প্রবেশ

দিদিমা। ও নরু, সূর্য যে অস্ত যায়!

নরহরি। ছি দিদিমা, সূর্য অস্ত যায় না। পৃথিবীই উলটে যায়। রোসো, আমি তোমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছি। ( চারি দিকে চাহিয়া) একটা গোল জিনিস কোথাও নেই?

দিদিমা। এই তোমার মাথা আছে — মুণ্ডু আছে।

নরহরি। কিন্তু মাথা যে বদ্ধ, মাথা যে ঘোরে না।

দিদিমা। তোমারই ঘোরে না, তোমার রকম দেখে পাড়াসুদ্ধ লোকের মাথা ঘুরছে! নাও, আর তোমায় বোঝাতে হবে না, এ দিকে ভাত জুড়িয়ে গেল, মাছি ভন্‌ ভন্‌ করছে।

নরহরি। ছি দিদিমা, এটা যে তুমি উলটো কথা বললে! মাছি তো ভন্‌ ভন্‌ করে না। মাছির ডানা থেকেই এইরকম শব্দ হয়। রোসো, আমি তোমাকে প্রমাণ করে দিচ্ছি —

দিদিমা। কাজ নেই তোমার প্রমাণ করে।

[ প্রস্থান


দ্বিতীয় দৃশ্য


নরহরি চিন্তামগ্ন। ভাবনা ভাঙাইবার উদ্দেশে নরহরির শিশু ভাগিনেয়কে কোলে করিয়া মাতার প্রবেশ

মা। ( শিশুর প্রতি) জাদু, তোমার মামাকে দণ্ডবৎ করো।

নরহরি। ছি মা, ওকে ভুল শিখিয়ো না। একটু ভেবে দেখলেই বুঝতে পারবে, ব্যাকরণ-অনুসারে দণ্ডবৎ করা হতেই পারে না — দণ্ডবৎ হওয়া বলে। কেন বুঝতে পেরেছ মা? কেননা দণ্ডবৎ মানে-

মা। না বাবা, আমাকে পরে বুঝিয়ে দিলেই হবে। তোমার ভাগ্‌নেকে এখন একটু আদর করো।

নরহরি। আদর করব? আচ্ছা, এসো আদর করি। ( শিশুকে কোলে লইয়া) কী করে আদর আরম্ভ করি? রোসো, একটু ভাবি।

চিন্তামগ্ন

মা। আদর করবি, তাতেও ভাবতে হবে নরু?

নরহরি। ভাবতে হবে না মা? বল কী! ছেলেবেলাকার আদরের উপরে ছেলের সমস্ত ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তা কি জান? ছেলেবেলাকার এক-একটা সামান্য ঘটনার ছায়া বৃহৎ আকার ধরে আমাদের সমস্ত যৌবনকালকে, আমাদের সমস্ত জীবনকে আচ্ছন্ন করে রাখে এটা যখন ভেবে দেখা যায় — তখন কি ছেলেকে আদর করা একটা সামান্য কাজ বলে মনে করা যায়? এইটে একবার ভেবে দেখো দেখি মা!

মা। থাক্‌ বাবা, সে কথা আর-একটু পরে ভাবব, এখন তোমার ভাগ্‌নেটির সঙ্গে দুটো কথা কও দেখি।

নরহরি। ওদের সঙ্গে এমন কথা কওয়া উচিত যাতে ওদের আমোদ এবং শিক্ষা দুই হয়। আচ্ছা, হরিদাস, তোমার নামের সমাস কী বলো দেখি।
হরিদাস। আমি চমা কাব।

মা। দেখো দেখি বাছা, ওকে এ-সব কথা জিগেস কর কেন? ও কী জানে!

নরহরি। না, ওকে এই বেলা থেকে এইরকম করে অল্পে অল্পে মুখস্থ করিয়ে দেব।

মা। ( ছেলে তুলিয়া লইয়া) না বাবা, কাজ নেই তোমার আদর করে।

নরহরি মাথায় হাত দিয়া পুনশ্চ চিন্তায় মগ্ন

(কাতর হইয়া ) বাবা, আমায় কাশী পাঠিয়ে দে, আমি কাশীবাসী হব।

নরহরি। তা যাও-না মা! তোমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি বাধা দেব না।

মা। ( স্বগত) নরু আমার সকল কথাতেই ভেবে অস্থির হয়ে পড়ে, এটাতে বড়ো বেশি ভাবতে হল না। ( প্রকাশ্যে) তা হলে তো আমাকে মাসে মাসে কিছু টাকার বন্দোবস্ত করে দিতে হবে।

নরহরি। সত্যি নাকি? তা হলে আমাকে আর কিছুদিন ধরে ভাবতে হবে। একথা নিতান্ত সহজ নয়। আমি এক হপ্তা ভেবে পরে বলব।

মা। ( ব্যস্ত হইয়া) না বাবা, তোমার আর ভাবতে হবে না — আমার কাশী গিয়ে কাজ নেই।