Madhyamik Suggestion 2020-



 

গল্প / কবিতা:

1.     রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই। – এমন উক্তির কারণ কী?
2.     পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?’ – কোন ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে? কেন বলা হয়েছে
3.     তপনের মাথায় ঢোকে না – সে কী পড়ছে।” – তপন কী পড়ছিল? কেন তা তার মাথায় ঢোকেনি?
4.     একটু কারেকশন’ করে ইয়ে করে দিলে ছাপাতে দেওয়া চলে। – কে, কী কারেকশানের কথা বলেছে? তা কারেকশানের কথা বলা হয়েছে কেন?
5.     হরিদার উনানের হাঁড়িতে অনেক সময় শুধু জল ফোটে, ভাত ফোটে না।’ - হরিদার জীবিকা কী? কেন তার হাঁড়িতে কেবল জলই ফোটে?
6.     আপনি কি ভগবানের চেয়েও বড়ো?- কার প্রতি এমন উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী?
7.     পরম সুখ কাকে বলে জানেন?- কার উক্তি? ‘পরম সুখ বলতে কী বুঝিয়েছেন?
8.     তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়। - কার ঢং নষ্ট হবে? কী করলে ঢং নষ্ট হয়ে। যাবে?
9.     অদৃষ্ট কখনও হরিদার এই ভুল ক্ষমা করবে না।’ – অদৃষ্ট’ শব্দের অর্থ কী? এমন উক্তির কারণ কী?
10.   হরিদার জীবন এইরকম বহুরূপের খেলা দেখিয়েই একরকম চলে যাচ্ছে। - হরিদার ‘বহুরূপের’র পরিচয় দাও।
11.   জগদীশবাবু বিরাগীকে তীর্থ ভ্রমণের জন্য কত টাকা দিতে চেয়েছিলেন। সেই টাকা তিনি নেননি কেন?
12.   বাবা-ই একদিন তাঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন। – বক্তা কে? তাঁর বাবা কাকে, কী চাকরি করে দিয়েছিলেন?
13.   সহসা আশঙ্কা হয়, সংসারের মিয়াদ বােধ করি বেশি দিন নাই,’ – কার সম্পর্কে এই মন্তব্য? কেন এই মন্তব্য?
14.   কেবল এই জন্যই যেন সে আজও বাঁচিয়ে আছে। –সে’ কে? তার সম্পর্কে এমন মন্তব্যের কারণ কী?
15.   সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি। – কার উক্তি? কী কারণে এই উক্তি?
16.   তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখুন। - কার উক্তি? কেন এই উক্তি?
17.   কীরূপ সদাশয় ব্যক্তি ইনি।' কার সম্পর্কে এই উক্তি? কেন এই উক্তি?
18.   রাত্রের মেল ট্রেনটার প্রতি একটু নজর রেখো,’ – কার উক্তি? কেন?
19.   কাল তাহার ঘরে চুরি হইয়া গেছে,’ – কার ঘরে চুরি হয়েছে? সবকিছু চুরি হয়নি কেন?
20.   তিনি ঢের বেশি আমার আপনার। – কার সম্পর্কে এই উক্তি? কেন?
21.   তার লাঞ্ছনা এই কালাে চামড়ার নীচে কম জ্বলে না।’ – কে, কাকে এই উক্তি করেছে? এমন উক্তির কারণ কী?
22.   'আমার ইচ্ছে তুমি একবার সবগুলাে দেখে আস।' কে, কী দেখে আসতে বলেছে? কেন সেগুলাে দেখতে বলেছে?
23.   কিন্তু তোমার বাপ একটু ভুল হয়েছে,’ – কার ভুল হয়েছে? কী ভুল হয়েছে?
24.   ইহা যে কতবড় ভ্রম তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে অনুভব করিল। – কে অনুভব করেছিল? কী অনুভব করেছিল?
25.   অমৃত ও ইসাবের কোন্ কোন্ বিষয়ে মিল ও অমিল?
26.   মা ওকে অনেক বুঝিয়েছিল,- কাকে বুঝিয়েছিল? কেন বুঝিয়েছিল?
27.   ইসাবের মেজাজ চড়ে গেল।’-ইসাব কে? মেজাজ চড়ে যাওয়ায় সে কী করেছিল?
28.   এই আওয়াজে মুখরিত হয়ে উঠল’ - কোন আওয়াজের কথা বলা হয়েছে আওয়াজ ওঠার কারণ কী?
29.   নদীর বিদ্রোহের কারণ সে বুঝিতে পারিয়াছে।' কে বুঝতে পেরেছে? নদীর বিদে বলতে সে কী বােঝাতে চেয়েছেন?
30.   নদীকে না দেখিলে সে বাঁচিবে না।' সে’ কে? কেন এমন বলা হয়েছে?
31.   ত্রিশ বছর বয়সে... এত বেশি মায়া একটু অস্বাভাবিক।’ - কার, কীসের প্রতি মায়া। তাকে অস্বাভাবিক বলা হয়েছে কেন?
32.   নদেরচাঁদ সব বোঝে, নিজেকে কেবল বুঝাইতে পারে না।' নদেরচাঁদ কী বোঝে। কেন সে নিজেকে বোঝাতে পারে না।
33.   নদীকে এভাবে ভালোবাসিবার একটা কৈফিয়ত... দিতে পারে? কার কথা বলা হয়েছে। সে কী কৈফিয়ত দিয়েছিল?
34.   সে প্রায় কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল;- কী দেখে কেঁদে ছিল? কেমনভাবে কেঁদেছিল?
35.   প্রথমবার নদীর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়াই... স্তম্ভিত হইয়া গেল। – কে স্তম্ভিত হয়েছিল?
36.   খেলা করিবার লােভটা সে সামলাইতে পারিল না।’- কার কথা বলা হয়েছে? কীভাবে সে খেলা করেছিল?
37.   সে কী মুষলধারায় বর্ষণ!’ – মুষলধারার মধ্যে কী শুনেছিল? সেই শব্দে তার কেমন অবস্থা হয়েছিল?
38.   তারপর সে অতি কষ্টে উঠিয়া দাঁড়াইল।’ – কে উঠে দাঁড়াল? কেন?
39.   রক্তের একটা কালো দাগ’ – এই দাগ কোথায় লেগেছিল? সেই দাগ লেগেছিল কেন?
40.   এল ওরা লোহার হাত কড়ি নিয়ে, - ‘ওরা কারা? ওরা তারপর কী করেছিল?
41.   নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষ’ - কাদের কথা বলা হয়েছে? কীভাবে তারা অমানুষতা প্রকাশ করেছিল?
42.   চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।’ – কারা, কীভাবে চিরচিহ্ন দিয়ে। গিয়েছিল?
43.   গুপ্ত গহ্বর থেকে পশুরা বেরিয়ে এল’ – কখন তারা বেরিয়ে এসেছিল? সেখান থেকে বেরিয়ে তারা কী করেছিল?
44.   এ অদ্ভুত বারতা, জননী/কোথায় পাইলে তুমি,- কার উক্তি? কোন বার্তা? কেন তা অদ্ভুত?
45.   হা ধিক্ মোরে!’ – বক্তা কে? নিজেকে ধিক্কার দেওয়ার কারণ কী?
46.   বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী!- ‘বিধুমুখী’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তার কাছে। বিদায় চাওয়া হয়েছে কেন?
47.   কাঁপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি!’ –জলধি’ শব্দের অর্থ কী? কেন তা কেঁপেছিল?
48.   এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি!’ – কোন্ মায়া? এমন উক্তির কারণ কী?
49.   হায়, বিধি বাম মম প্রতি। - কার উক্তি? এমন উক্তির কারণ কী?
50.   এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে। - ‘ঘুষিবে’ কোন পদ? কোন কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে?
51.   আগে পূজ ইষ্টদেবে’ – কার প্রতি, কার উক্তি? কেন এই উক্তি?
52.   প্রভাতে যুঝিও’ – কার উক্তি? কেন ওই উক্তি?
53.   জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া,’ – কাকে “মহাবাহু’ বলা হয়েছে? তার বিস্ময়ের কারণ।
54.   আসছে নবীন – জীবনহারা অ-সুন্দরে করতে ছেদন!’ – উক্তিটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
55.   পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন। পঞ্চকন্যা কারা? তারা কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছিল?




কমবেশি ১৫০ শব্দে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

1.     জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের’ –জ্ঞানচক্ষু’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? কীভাবে এই ‘জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের?
2.     তপন গড়গড়িয়ে পড়ে যায়। তপনের মাথায় ঢোকে না – তপন কী গড়গড়িয়ে পড়ে যায়? তা তপনের মাথায় ঢােকে না কেন? শেষপর্যন্ত তপন কী করেছিল?
3.     তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন’ – কেন এমন মনে হয়েছিল। বিশদভাবে আলোচনা করো।
4.     এই দুঃখের মুহুর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন,’ – তপনের কীসের দুঃখ? দুঃখের মুহূর্তে সে কী সংকল্প করে?
5.     এই জানোয়ারটাকে ওয়াচ করবার দরকার নেই বড়োবাবু’ - বড়োবাবু কে? জানোয়ার বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে? তাকে ওয়াচ করার দরকার নেই কেন?
6.     তাহার পরিচ্ছদের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া মুখ ফিরাইয়া হাসি গোপন করিল। পোশাক-পরিচ্ছদ, চেহারা ও চরিত্রের পরিচয় দাও।।
7.     বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে তা স্বীকার করতে হবে। কে? বাবুটি কে? তার স্বাস্থ্য ও শখের বর্ণনা দাও।
8.     পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার গল্প শুনে তাদেরও বুক ভরে গেল। – কাদের কত হয়েছে? তাদের ভালোবাসার পরিচয় দাও?
9.     জাত নয়, ধর্ম নয়, মানবতাই বড়ো’ – একথা কীভাবে ‘অদল-বদল’ গল্পের মলসহ উঠেছে আলোচনা করো।
10.   সম্প্রীতির গল্প হিসাবে ‘অদল-বদল’ গল্পের সার্থকতা বিচার করো।
11.   পথের দাবি’ রচনাংশ অবলম্বনে গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-পরিচ্ছদ, চেহারা ও চরিত্রের পরিচয় দাও।


কমবেশি ১৫০ শব্দে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

1.     তারপর যুদ্ধ এল’ – যুদ্ধ কেমনভাবে এসেছিল? যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
2.     সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না’ – মেয়েটি ছাড়া আর কী কী ধ্বংস হয়েছিল? মেয়েটির মৃত্যু হল। না বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
3.     আয় আরাে বেঁধে বেঁধে থাকি’ – কবিতায় কবি বেঁধে বেঁধে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কেন?
4.     নমি পুত্র পিতার চরণে, করজোড়ে কহিলা;’ – পিতা ও পুত্র বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? উভয়ের কথোপকথন নিজের ভাষায় লেখাে।
5.     অভিষেক’ কবিতা অবলম্বনে ‘মেঘনাদ’ চরিত্র আলোচনা করো।
6.     কাল ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে সুন্দর’ – কবির বক্তব্যটির অর্থ বিশ্লেষণ করো।
7.     প্রলয়ােল্লাস’ কবিতার নামকরণের স্বার্থকতা বিচার করো।
8.     পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন’ – পঞ্চকন্যা কাদের বলা হয়েছে? তারা কীভাবে চেতনা ফিরে পেয়েছিল?
9.     দেখিয়া রূপের কলা বিস্মিত হইল বালা’ – এখানে ‘বালা’ কে? বালার সৌন্দর্যপ্রীতির পরিচয়। দাও।
10.   প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কবি কেন ‘জয়ধ্বনি করতে বলেছেন? এই ‘জয়ধ্বনি’র মধ্যে দিয়ে কবি কী পরিবর্তন প্রত্যাশা করেছেন?




 কমবেশি ১৫০ শব্দে যে কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

1.     আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।” – কোন জিনিস অবলুপ্তির পথে? এই অবলুপ্তির ক কী? এ বিষয়ে প্রাবন্ধিকের কী অভিমত?
2.     জন্মনিল ফাউন্টেন পেন।” – ৪টি ফাউন্টেন পেনের নাম লেখো। ফাউন্টেন পেনের ইতিহাস সংযোগে আলোচনা করো।
3.     কলমকে বলা হয় তলােয়ারের চেয়েও শক্তিধর’ –কলম’ ও ‘তলোয়ারের পৃথক ভূমিকা কী? কলমকে তলোয়ারের চেয়ে শক্তিধর বলা হয়েছে কেন?
4.     ক্যালিগ্রাফিস্ট’ বা লিপিকুশলী কাদের বলা হয়? প্রাবন্ধিক এঁদের সম্বন্ধে কী বলেছেন?
5.     ফাউন্টেন পেন বাংলায় কী নামে পরিচিত? এই নামটি কার দেওয়া? এর জন্ম ইতিহাস।সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
6.     বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় এখনও নানারকম বাধা আছে।' এই বাধা দূর করতে লেখক কী কী পরামর্শ দিয়েছেন তা আলোচনা করো।
7.     বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান প্রবন্ধে পরিভাষা রচনা প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক যে বক্তব্য ব্যক্ত করেছেন, তা আলোচনা করো।
8.     আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন’ - শব্দের ত্রিবিধ কথাগুলি কী কী? প্রবন্ধ অবলম্বনে তা বুঝিয়ে লেখো
9.     এই দোষ থেকে মুক্ত না হলে বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হবে না।' কোন দোষের কথা বলা হয়েছে? বৈজ্ঞানিক সাহিত্য কীভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন?  
10.   এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত। – কোন কথা মনে রাখা উচিত? কেন তা মনে রাখা উচিত?




কমবেশি ১২৫ শব্দে যে কোনোএকটি প্রশ্নের উত্তর দাও :

1.     বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয় – মিলিত হিন্দু-মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা। - কাদের উদ্দেশ্যে একথা বলা হয়েছে? এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার। চরিত্রের কী বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?
2.     মুন্সিজি, এই পত্রের মর্ম সভাসদদের বুঝিয়ে দিন। - কে, কাকে পত্র লিখেছিলেন? এই পত্রে কী লেখা ছিল?
3.     সিরাজদ্দৌলা’ নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজের চরিত্র বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
4.     বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা’ – সিরাজ কেন বাংলার ভাগ্যাকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা দেখতে পেয়েছেন?
5.     কিন্তু ভদ্রতার অযােগ্য তােমরা’ – কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলা হয়েছে? এমন বলার কারণ কী?
6.     আপনাদের কাছে এই ভিক্ষা যে, আমাকে শুধু এই আশ্বাস দিন। – কাদের কাছে বক্তা ‘ভিক্ষা’ চান? তিনি কী আশ্বাস প্রত্যাশা করেন?
7.     বেগমকে আজীবন আমারই মতাে কেঁদে কাটাতে হবে।” – বক্তা কে? বেগম কে? বক্তার কেঁদে কাটানাের কারণ কী?
8.     ছল করে ধরে এনে পাপপুরীতে বন্দি করে রাখল’ – কার উক্তি? কেন এই উক্তি?
9.     নবাব যদি কলকাতা আক্রমণ না করতেন, তা হলে এসব কিছুই আজ হত না।’ – বক্তা কে? কেন এই উক্তি?
10.   আজ কার রক্ত সে চায়।” – কার উক্তি? কেন এই উক্তি?
11.   মাত্র পনেরোটি মাস আমি রাজত্ব করছি’ - কে, কাকে এই উক্তিটি করেছে? তাঁর পনেরো মাসের অভিজ্ঞতাটি উল্লেখ করো।




কমবেশি ১৫০ শব্দে  প্রশ্নের উত্তর দাও :

1.     কোন উপন্যাস অবলম্বনে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষীতিশ সিংহের চরিত্র সংক্ষেপে আলােচনা করাে।
2.     এইটেই তাে আমি রে, যন্ত্রণাটাই তো আমি’ – বক্তা কে? উক্তিটির তাৎপর্য বিয়ে
3.     অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল। – কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার জায়গা পেল।
4.     অত খাটাবেন আর খেতে দেবেন না?- কে, কাকে কথাগুলি বলেছে? কোন কথাগুলি বলেছে?
5.     ক্ষীতিশ সিংহ জুপিটারের চিফট্রেনারের পদ ছাড়লেন কেন? তার কারণ বিস্তারিত বর্ণনা করো।
6.     কোনির পারিবারিক জীবনের পরিচয় দাও।
7.     ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছিল – সে সম্পর্কে আলোচনা করো।
8.     জোচ্চুরি করে আমাকে বসিয়ে রেখে এখন ঠেকায় পড়ে এসেছ আমার কাছে।” – কোনির এই অভিমানের কারণ কী? এর পরবর্তী ঘটনা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
9.     আজ বারুণী’ - বারুণী’ তিথি কী? এই তিথিতে গঙ্গার ঘাটের দৃশ্য যেভাবে কোনি। উপন্যাসে ফুটে উঠেছে তা আলােচনা করাে।
10.   কোনির সংগ্রাম শুধু জলে নয়, দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধেও’ – আলোচনা করো।
11.   ফাইট, কোনি ফাইট।’ – কোনি কীভাবে ফাইট দিয়েছিল, তা আলোচনা করো।





সংলাপ :

1.     কুসংস্কার প্রতিরোধে বিজ্ঞানমনস্কতা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
2.     তোমার এলাকায় একটি পাঠাগার উদ্বোধন হল – এ বিষয়ে সংলাপ রচনা করো
3.     নারী-স্বাধীনতা বিষয়ে কাল্পনিক সংলাপ।
4.     গ্রামীণ এলাকায় সরকারি হাসপাতাল উদ্বোধন বিষয়ে সংলাপ রচনা।
5.     ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক বিষয়ে সংলাপ রচনা করো।
6.     জলা বুজিয়ে আবাসন নয় – বিষয়ে সংলাপ।
7.     বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ রচনা।
8.     পশ্চিমবঙ্গে শিল্পসম্ভাবনা নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ।
9.     পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু করা বিষয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ।




প্রতিবেদন :

1.     সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে প্রতিবেদন
2.     পরিবেশ দূষণ তীব্রতা নিয়ে অঞ্চলবাসী উদবিগ্ন
3.     ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এলাকাবাসী
4.     বিদ্যসাগর জয়ন্তী পালন
5.     বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ
6.     আইনি গাছ কাটা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ
7.     তোমার এলাকায় পাঠাগার উদ্বোধন
8.     তোমার  বিদ্যালয়ে শিক্ষক দিবস উদযাপন




প্রবন্ধ রচনা করো :

1.     দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান
2.     বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য
3.     বিজ্ঞানের জয় বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ
4.     বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা
5.     বিজ্ঞানের ভালো মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা
6.     পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
7.     বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
8.     বিজ্ঞানের ভালোমন্দ
9.     তোমার জীবনের লক্ষ্য





















































#Searches related to madhyamik bangla suggestion2020
#madhyamik bengali suggestion 2020 pdf
#madhyamik suggestion 2020 pdf
#madhyamik bengali suggestion 2019 pdf
#madhyamik suggestion 2020 pdf free download
#madhyamik suggestion 2019 bengali
#madhyamik english suggestion 2020
#madhyamik history suggestion 2020

#madhyamik geography suggestion 2020

সহাবস্থান - সমরেশ মজুমদার

সহাবস্থান
সমরেশ মজুমদার
এখন বিকেল। ব্যালকনিতে চেয়ার পেতে বসেছিলেন দিব্যজ্যোতি। সামনে চোখ মেললেই চোখের শান্তি হয়। কোথাও কোনও বাধার প্রাচীর নেই। দক্ষিণ দিক, বোধহয় বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একদম খোলা। নিবারণ ঢোল ঠিকই বলে। এত মিষ্টি হাওয়া তিনি কোনওদিন গায়ে মাখেননি।
শরীরটা জুত নেই। আজকাল নিয়মের ব্যতিক্রম হলেই এমন হয়। ঠিক সময়ে খাওয়া, শোওয়া, ঘুমাবার চেষ্টা চালিয়ে আচ্ছন্ন হয়ে থাকা এবং বই পড়া, জীবন বলতে এখন এই। লতিকার তাগাদায় জীবনের শেষপ্রান্তে এসে একটা মোচড় এল। শোভাবাজারে ঘিঞ্জিতে তিনি হাঁটতে পারতেন না। এখানে এত সবুজ মাঠে হাঁটতে হাওয়া লাগবে। মল্লিকবাড়ির অন্দরে হাওয়া ঢুকত কিন্তু এখানে ঈশ্বরের দাক্ষিণ্য পর্যাপ্ত। নিবারণকে দেখে তার খারাপ লাগছে না। ওর সঙ্গে কথা বলেও আরাম পাওয়া যাবে। আশেপাশের ফ্ল্যাটের মানুষ যারা আসবে তারা কেমন হয় সেইটেই ভাবনার। দিব্যজ্যোতি খুশি মনে ঘরের ভেতরটা লক্ষ করলেন মুখ ফিরিয়ে। আর অমনি বুকের ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। কোনও আভিজাত্য নেই, দেশলাই বাক্সের মতো দেওয়াল, শুনতেই সব মিলিয়ে অনেক স্কোয়ার ফুট কিন্তু কেমন খোপ-খোপ। আজন্ম মল্লিকবাড়ির সেই বিশাল থামওয়ালা বড়-বড় ঘরে বারো ইঞ্চি দেওয়ালের মধ্যে থেকে এসে এটিকে খেলাঘর বলে মনে হচ্ছে। খেলাঘর বটে–জীবনের সব পাট চুকিয়ে, আত্মীয়-অনাত্মীয়দের সব মুখের চেহারা দেখে এই খেলাঘর পেতেছে লতিকা তাকে নিয়ে।
অত হাওয়া লাগিও না ঠান্ডা লেগে যাবে। পেছনে এসে দাঁড়ালেন লতিকা। তারপর স্বামীর বুক গলায় একটা পাতলা চাদর জড়িয়ে দিলেন। ঠান্ডা লাগছিল না কিন্তু এতে বেশ আরাম হল। দিব্যজ্যোতির। হেসে বললেন, কলকাতা শহরে গরমকালে চাদর জড়িয়ে বসে আছি, কী কাণ্ড! শোভাবাজারে এমনটা ভাবতেও পারেনি লতিকা।লতিকা চারপাশে তাকালেন, শুধু শূন্য মাঠ আর দূরে-দূরে অর্ধসমাপ্ত কিছু বাড়ি। আকাশ এখন টকটকে হয়ে আছে; সূর্য ডুবুডুবু। লতিকা। বললেন, আঃ, এত আরাম ভগবান আমার কপালে লিখে রেখেছিলেন আমি স্বপ্নেও ভাবিনি গো।
দিব্যজ্যোতি তাকালেন স্ত্রী-র দিকে। বয়স সর্বাঙ্গে স্পষ্ট কিন্তু চুলে পাক ধরেনি, দাঁতও পড়েনি। একটু মোটা হয়ে গেছেন বটে লতিকা কিন্তু খাটতে দ্বিধা করেন না। এখন ওঁর দিকে পেছন ফিরে রেলিং-এ ভর করে পৃথিবী দেখছেন যে মহিলা তিনি তাঁর স্ত্রী। সাদা শাড়িতে রং খুঁজে পাওয়া ভার। দিব্যজ্যোতি ডাকলেন, তু!
লতিকা চমকে ফিরে তাকালেন। দিব্যজ্যোতি অবাক হলেন, কি হল, অমন করলে কেন?
লতিকা মৃদু মাথা নাড়ালেন, না, কিছু না। বলো?
কিছু তো বটেই। বলো বলতে চাও না। দিব্যজ্যোতি নিজের গলায় অভিমান শুনলেন।
লতিকা হাসলেন, কি বলছিলে বলো! বুঝেছি চা চাই।
তাহলে মন্দ হয় না। কিন্তু তোমার ঝামেলা বাড়িয়ে কী লাভ!
চা আর ভাতের ব্যবস্থা এসেই করেছি। এ বাড়িতে আজ নতুন তোমার জীবন।
হ্যাঁ, কত বয়স হল?
বছর গুনো না। বছরের হিসেব আর ভালো লাগেনা। কি বলছিলে তখন? লতিকা পাশে এসে দাঁড়ালেন।
খুব অন্তরঙ্গ কিছু কথা বুকে ছটফট করছিল দিব্যজ্যোতির। তিনি জানেন লতিকা সেই কথাগুলোর আন্দাজ পেয়েছে। দীর্ঘদিন ভালোবেসে একসঙ্গে থাকলে মাটিও আকাশকে বুঝতে পারে। কিন্তু এখন এই মুহূর্তে কথাগুলো উচ্চারণ করলে নিজের কানেই অন্যরকম ঠেকবে বলে মনে হল তাঁর। তিনি বললেন, বলছিলাম, আমার গায়ের চাদর জড়িয়ে দিলে কিন্তু নিজে তো এই হাওয়া গায়ে মাখছ।
লতিকার চোখ ছোট হল। তারপরেই হাসি ফুটল ঠোঁটে, আমার কিছু হবে না। মেয়েদের ঠান্ডা কম লাগে। শশাভাবাজারে শীতকালে কীরকম জামা পরতাম? শরীরে এখন এত চর্বি, ঠান্ডাটা ঢুকবে কোত্থেকে? তুমি বসো, আমি চা আনছি।
লতিকা চলে গেলেন ভেতরে। দিব্যজ্যোতি মাথা নিচু করলেন। এই সময়টা মন্দ কি! দু-জনেই জানেন কথাটা বলা হল না কিন্তু অন্য কথার ভিড়ে তা ডুবিয়ে রাখাই মাঝে-মাঝে আরামদায়ক। সারাটা জীবন শুধু যেমন অন্যের জন্যে খরচ করে যাওয়া!
আর একটু বাদে উঠে দাঁড়ালেন দিব্যজ্যোতি। সত্যি শীত লাগছে এখন। হাওয়ার দাপট বাড়ছে, আকাশের গায়ে একটু কালো ছাপ। ঘরে ঢুকে আলো জ্বাললেন। নতুন বাল্বের আলোয় ঘরটা ঝকমকিয়ে উঠল। এইটে তাদের শোওয়ার ঘর। কোনওমতে একটি খাট পাতা হয়েছে। আর কিছুই সাজিয়ে রাখা হয়নি। পাশের ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে সুইচ টিপলেন–এটি দ্বিতীয় শোওয়ার ঘর। আপাতত এখানেই সমস্ত জিনিস স্তূপ করে রাখা হয়েছে। আলমারি থেকে চেয়ার, লতিকার রান্নার সব জিনিসপত্র। এগুলোও তিনি অনেক-অনেক কাল দেখে আসছেন। শোভাবাজারের বাড়িতে যাদের মানাত এখানে তাদের দেখতে অস্বস্তি হচ্ছে। এই আধুনিক ফ্ল্যাটে পুরোনো আসবাব বড় বেমানান। কিন্তু নতুন কিছু কেনার সামর্থ্য কোথায়?বাইরের ঘরের দরজায় এসে আলো জ্বাললেন। সোফাসেট। ওই টুলটা ঠাকুরমার আমলের। এখনও কীরকম চকচক করছে। হঠাৎ দিব্যজ্যোতির মনে হল, এই আধুনিক বাড়িতে তিনি বা তাঁরা কতটা মানানসই? এই গিলে করা পাঞ্জাবি, কোঁচাননা ধুতি আর সুতির চাদর? এই সময়ে সশব্দে কলিং বেল জানিয়ে দিল কেউ এসেছে। দরজা খুলতে গিয়ে সচেতন হলেন দিব্যজ্যোতি। আগন্তুক অবাঞ্ছিত কিনা তা জানবার জন্যে এখানকার দরজায় ছোট ফুটো থাকে। তাতে চোখ রেখে ভালো লাগল তাঁর, নিবারণ এসেছে। দরজা খুলে প্রসন্ন মুখে তাকালেন, এসো, নিবারণ।
সব ঠিক আছে? কোনও প্রবলেম নেই? নিবারণ হাত তুলে প্রশ্ন করল।
বাইরে দাঁড়িয়ে তো সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা যায় না। ভেতরে আসতে বলেছি।
দিব্যজ্যোতির কথায় ভেতরে ঢুকে নিবারণ বলল, একি। জানালাগুলো খোলেননি কেন? ঘরে গুমোট হবে। বলেই সে জানালার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, দিব্যজ্যোতি বাধা দিলেন, না-না, থাক এখন, মশা ঢুকবে।
মশা? নো মশা হিয়ার। থাকলে একদম রোগা পটকা।
থাক না। তুমি বসো। আসলে খুললেও তো বন্ধ করতে হবে।
ততক্ষণে একটি জানালা খুলে ফেলেছে নিবারণ, বন্ধ করার ভয়ে খুলবেন না? ঠিক আছে, যাওয়ার সময় আমি বন্ধ করে দেব। আর দেখেছেন কি হাওয়া! কি পবিত্র!
পবিত্র! দিব্যজ্যোতি চমকে উঠলেন, শব্দটা খুব ভালো বললে হে। তুমি কি কবিতা লেখো? পবিত্র হাওয়া। বাঃ!
নিবারণ লজ্জা পেল, না-না। অশিক্ষিত মানুষ, এসব ক্ষমতা আমার কোথায়?মুখে যা আসে বলে ফেলি। বলার পরও কেউ না বলে দিলে বুঝতে পারি না কথাটা ভালো।
দিব্যজ্যোতি ভালো করে ছেলেটিকে লক্ষ্য করলেন, যে বয়স শুনেছেন, চেহারায় সেটি মালুম হয় না। তিনি অন্য প্রসঙ্গে গেলেন, আর সব ফ্ল্যাটের মানুষ কবে আসছেন?
এসে গেলেন বলে। আমরা তো তৈরি হয়ে বসে আছি। এখন ঠিক আছে, সবাই এসে গেলে একা আমায় সব ঝক্কি সামলাতে হবে। প্রাণহরিবাবু, চেনেন তো ওঁকে, ওই যে মিটিং-এর দিন যিনি আপনাদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাদের ম্যানেজার। ছি, ছি, এই দেখুন বলি কথাটা ম্যানেজার কিন্তু সঙ্গদোষে জিভে যে উচ্চারণ ঢুকেছিল তাই বেরিয়ে আসে। যা বলছিলাম, প্রাণহরিবাবু মাঝে-মাঝে আসবেন এখানে। অতএব আমার একার ঘাড়ে সব। কিন্তু কাজ দেখে পালাবার পাত্র নই আমি। নিবারণ যেন নিজের সঙ্গেই কথা বলছিলেন, ব্যাপারটা লক্ষ করলেন দিব্যজ্যোতি।
তিনি বললেন, তোমরা এই বাড়িটার নাম জব্বর দিয়েছ হে!
তা যা বলেছেন। বাঙালি থেকে চিনে সবাই আসছেন তখন বাড়ির নাম কলকাতা ভালো মানাচ্ছে। আমি এবার উঠি। উশখুশ করল নিবারণ।
উঠবে মানে? এলেই বা কেন?
এই প্রথম সন্ধে, আপনারা আছেন কেমন দেখতে ইচ্ছে করল।
খুব ভালো ইচ্ছে। বসো তো! তোমার সঙ্গে গল্প করতে আমার ভালো লাগছে।
এই সময় দু-কাপ চা হাতে লতিকা দরজায় এসে দাঁড়াতেই নিবারণ উঠে দাঁড়িয়ে হাতজোড় করল, ছি-ছি, আপনি আমার জন্যেও চা করলেন?
একজনের চা তৈরিতে যে পরিশ্রম, দুজনের কিন্তু তা ডবল হয়ে যায় না, আপনি অনেকদিন বাঁচবেন! লতিকা টেবিলে চা নামিয়ে রাখলেন।
দিব্যজ্যোতি একটু চিমটি কাটলেন, তুমি আবার কখন মনে করলে ওকে!
করেছি। উলটোদিকের সোফায় গুছিয়ে বসলেন লতিকা।
নিবারণ একদৃষ্টিতে লতিকার দিকে তাকিয়েছিল। বিব্রত মুখে লতিকা প্রশ্ন করলেন, কি দেখছেন ওরকম করে?
নিবারণ মাথা নাড়ল, আপনি না কি বলব সাক্ষাৎ মা দুর্গার মতো দেখতে।
হঠাৎ ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলেন দিব্যজ্যোতি, লতিকার মুখে রক্ত জমল। নিবারণ তার কথায় জোর দিল, হ্যাঁ, আমি মিথ্যে বলছি না। আপনার দিকে তাকিয়েই কেমন ভক্তি-ভক্তি ভাব জাগে।
দিব্যজ্যোতির গলায় তখনও হাসির রেশ, ঠিকই বলেছ ভাই। আমার তো সারাজীবন ওই করে কেটে গেল।
লতিকা কৃত্রিম রোষ দেখালেন, থামো তো! নিবারণবাবু, আপনার সঙ্গে আমার কয়েকটা কথা আছে। আপনি না এলে আমাকেই ডাকতে যেতে হত। কিন্তু এত বড় বাড়ি একদম খালি হয়ে রয়েছে, ভয়-ভয় লাগে।
দিব্যজ্যোতি বললেন, এখন বাড়ি খালি বলে ভয় পাচ্ছ, বাড়ি ভরে গেলে আবার লোক দেখে হাঁপিয়ে উঠবে।
উঠি উঠব তবু শোভাবাজারের বাড়ির মতো ঘরকুনো হয়ে থাকতে তো হবে না। শুনুন, ওঁকে তো বলে কোনও লাভ নেই। একটা কথাও কানে ঢোকে না। আমার একজন পুরুত চাই। ভালো। পুরুত। লতিকা আবদারের গলায় জানালেন।
পুরুত মানে পুজো করবেন? এই তল্লাটে কোনও পুরোহিত আছে কিনা মনে করতে পারল না নিবারণ। প্রাণহরিবাবু ব্রাহ্মণ, উনি পুরুতগিরি করেন কিনা সেটা জানা নেই।
হ্যাঁ। গৃহপ্রবেশ করলাম অথচ একটা পুজো হল না, এটা খুব খারাপ ব্যাপার। আমি তাই বেশিরভাগ জিনিসপত্রে হাত দিইনি। পুজো করার পর গোছাব। আপনি কাল সকালেই একজন পুরুত এনে দিন। খুব বড় কিছু নয়, একটা পুজো করে নেব।
দিব্যজ্যোতি মন দিয়ে শুনছিলেন। এবার বললেন, ছাড়ো তো এসব! পুরুত নয়, আমাদের একটা ভালো কাজের লোক চাই। শোভাবাজারে যারা ছিল তারা পাড়া ছেড়ে এত দূরে আসতে চাইল না। তুমি ভাই একটি ঝি কিংবা চাকর দেখে দাও, নইলে তোমার ওই দুর্গাঠাকুরানির  ফাঁই ফরমাশ খাটতে-খাটতে আমার প্রাণ জেরবার হয়ে যাবে।
লতিকা ফুঁসে উঠলেন, বাজে বোকো না। শোভাবাজারে তো পায়ের ওপর পা তুলে থাকতে। লোক আজ না-হোক কাল পেয়ে যাব কিন্তু পুরুত আমার চাই কালকেই। ভয় পেয়ো না, তোমাকে এই পুজোর ব্যাপারে কিছু করতে হবে না। এখানে কোনও ঠাকুরবাড়ি নেই?
নিবারণ মাথা নাড়ল, আপনি তো কথাটা বলে ফেলেছেন, জোগাড় করার দায়িত্ব আমার। তবে একটা কথা, মন্ত্রটা নিয়ে খুঁতখুঁতুনি করবে না।
লতিকা শিউরে উঠলেন, ওমা, সেকি কথা!
দিব্যজ্যোতি হাসলেন, বিদ্যাস্থানে ভয়ে বচ। বঙ্গগৃহিণীরা এই করেই মরল।
মরি নিজের বাড়িতেই মরব। বিয়ের পর থেকেই মান্ধাতার আমলের বাড়িতে শরিকদের সঙ্গে ঝগড়া করে কাটাতে হয়েছে। তোমার আর কী! এখন একটু হাত-পা মেলার সুযোগ পেয়েছি, হাজার হোক নিজের বাড়ি বলে কথা।
এই সময় দুম করে আলো নিভে গেল। নিবারণ বলল, এই এক জ্বালা। ঘাবড়াবেন না, জেনারেটর আছে। দেখি গিয়ে।
নিবারণ অন্ধকারেই চা এক চুমুকে শেষ করে উঠে দাঁড়াল। দিব্যজ্যোতি হাঁ-হাঁ করে উঠলেন, অন্ধকারে যাবে কী করে? লতু টর্চ আনা।
নিবারণ বললেন, কিছু ব্যস্ত হবেন না। প্যাঁচাঁদের চেয়ে খারাপ দেখি না অন্ধকারে। কলকাতায় থাকতে-থাকতে সেটাও অভ্যাস হয়ে গেছে। কাল আপনি আপনার পুরুত পেয়ে যাবেন ঠিক। সকাল-সকাল আনব।
বাড়িটা এখন ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে। নিবারণ বেরিয়ে যাওয়ার পর দরজা দিয়ে লতিকা বললেন, এখানে ভূতের মতো বসে না থেকে বারান্দায় বসবে চলো।
মোমবাতি আনোনি? দিব্যজ্যোতির উঠতে ইচ্ছে করছিল না। জানালা দিয়ে খারাপ হাওয়া আসছে না।
লতিকা বললেন, এনেছি তবে এখন খুঁজে পাব না। বলে অন্ধকারেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।
কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ বসে রইলেন দিব্যজ্যোতি। খালি বাড়িতে খুটখাট শব্দ হচ্ছে। দিব্যজ্যোতির মনে হল খালি বাড়ি বলেই এই শব্দ। কিন্তু কিছুক্ষণ বাদেই তাঁর অস্বস্তি আরম্ভ হল। যেন ঘরের মধ্যেই তিনি শব্দের উৎস খুঁজে পাচ্ছেন। দিব্যজ্যোতি নিচু গলায় ডাকলেন, লতু! শব্দটা যেন কয়েকগুণ জোরে কানে বাজল। তিনি ধীরে-ধীরে উঠতে গিয়ে হোঁচট খেলেন। ডান পায়ের বুড়ো আঙুলের নখে ব্যথা লাগল টেবিলের পায়ে ধাক্কা লাগায়।
কিন্তু দাঁড়িয়ে থাকতে সাহস হল না। শোভাবাজারে কোনওকালেও ভূতের ভয় পায়নি। ওর এক জেঠিমা তান্ত্রিকদের খুব মানতেন। বিডন স্ট্রিটে এক তান্ত্রিকের কাছে যাওয়া আসা ছিল তাঁর। তন্ত্রমতে প্রেত পাঠানো যায় কারও ক্ষতি করতে অথবা কেউ ক্ষতি করছে জানলে সেই প্রেতকে দিয়ে পাহারা দেওয়ানো যায় এসব কথা শুনে-শুনে নেশা চড়িয়ে দিয়েছেন। এখন তাঁর মনে। অন্যরকমের ভয় এল। এই বিশাল শূন্যবাড়িতে একা থাকাটাই অসম্ভব। শব্দগুলো নানারকম মানে হয়ে কানের ভেতরে ঢুকছে।
দিব্যজ্যোতি হাতড়ে-হাতড়ে বারান্দায় চলে এসে থমকে দাঁড়ালেন। লতিকা গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। দিব্যজ্যোতি ঠিক করলেন চশমার  কাঁচ এবার পালটাতে হবে। যতই অন্ধকার হোক, লতিকাকে তিনি বেশ  ঝাঁপসা দেখছেন যেন। বাইরে অনেক দূরে টিমটিমে আলো। আর আকাশটা এখন মেঘমুক্ত কারণ ঠাসঠাস তারারা ঝকঝক করছে। দিব্যজ্যোতি আরও একটু এগোলেন। তাঁর পায়ের শব্দ এতক্ষণে লতিকার কানে যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু সে মুখ ফেরাচ্ছে না। মজা লাগল দিব্যজ্যোতির, মেয়েদের বয়স বাড়লেও মনের মধ্যে অভিমানের বাক্সটা ঢেকেঢুকে রাখে। সময় বুঝলেই খানিকটা খুলে দেখায়। দিব্যজ্যোতি বিকেলে যেটা বলতে গিয়ে পারেননি এই আধা অন্ধকারে যখন তারার আলোর মিশেল চারপাশে, তখন দু-হাত বাড়িয়ে লতিকাকে কাছে টানলেন। লতিকার শরীরটা এই বয়সেও নরম, অন্তত তাঁর চেয়ে নরম। কাঁধে চাপ দিয়ে ওঁকে ঘুরিয়ে মুখ লাগিয়ে লতিকার চিবুক তুলে অনেক-অনেকদিন পরে চুম্বন। করলেন তিনি। এক ঝটকায় মনে হল যৌবনের উচ্ছ্বাসের যে স্বাদ লতিকার ঠোঁটে পেতেন তার গন্ধ যেন নাকে লাগল। কিছু বলার জন্য তিনি মুখ খুলতে যেতেই লতিকা হু-হুঁ করে কেঁদে উঠলেন। তারপর দিব্যজ্যোতির বুকে মাথা রেখে সেই কান্নাটা গিলতে চেষ্টা করলেন।
কাঠ হয়ে গেলেন দিব্যজ্যোতি। কোনওমতে নিজেকে সামলে লতিকার পিঠে আলতো হাত বোলালেন। তারপর গাঢ়স্বরে বললেন, you must not, you must not!
তা এসব বছর পাঁচেক আগের কথা। সময়ের চড়া পড়ে-পড়ে এত সময় কোথাও এক ফোঁটা জল নেই বলে ধারণা জন্মেছিল দিব্যজ্যোতির কিন্তু এ স্রোত চোখের বাইরে দিয়ে বয়! চেয়ারে নড়েচড়ে বসলেন তিনি। সেই সময় লতিকা বলে উঠল, বড়খুকিদের আসতে লিখলাম।
জামাই ছুটি পায়নি। দিব্যজ্যোতি মনে করিয়ে দিলেন, বড়খুকির মেয়ের পরীক্ষা!
লতিকা জবাব দিলেন না। তাঁর কেবলই মনে হচ্ছিল ছুটি না পাওয়া, মেয়ের পরীক্ষা–এসব বাহানা। কেউ তাঁর ইচ্ছের দাম দিতে চায় না। কিন্তু আজ ওই বারান্দায় যাওয়ার পর, একা। দাঁড়িয়ে অন্ধকার দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিল ওর কথা। মনে হচ্ছিল কোথাও কি ভুল হয়ে গেছে? সে যেসব অন্যায় করেছে, চোরের মতো চলে গিয়ে তাঁরাও কি ওকে বুঝতে ভুল করেছেন?
ছোটবেলায় ছোটখুকি বলত, দেখো, আমি বড় হয়ে বিয়েই করব না। বিয়ে করলেই তো তোমাকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।দুই বোনের পার্থক্য ছিল দশ বছরের। বড়খুকির বিয়ের পরে তাঁর কান্না দেখে মেয়ে বলেছিল।
এই বাড়ি নিজের। কোনও শরিক নেই, কারও কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে না। এই সুখ তাঁর। অনেকদিনের আকাঙ্ক্ষায় ছিল। কিন্তু আজ কেন নিজেকে সুখী ভাবতে পারছেন না তিনি? হঠাৎ মুখ তুললেন লতিকা, মানুষ আর জন্তুর মধ্যে কী পার্থক্য জানো? সবাইকে নিয়ে সুখী হতে না পারলে মানুষের সুখ পূর্ণ হয় না।
কী বলতে চাইছ তুমি? দিব্যজ্যোতির বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠল।
আমি তোমার কাছে একটা ভিক্ষে চাইব?
ভিক্ষে বলছ কেন?
ছোটখুকি, ছোটখুকির কাছে একবার যেতে চাই।
কেন?
জানি না। কিন্তু না গেলে মন শান্ত হবে না।
সে যদি তোমায় অপমান করে?
আর কখনও যাব না।
না লতিকা। যাকে একবার মৃত ভেবেছ, তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখোনি, তাকে আর টেনে এনো না। স্মৃতি হাতড়ে পিছু ফেরা ভালো নয়। তোমার বড় মেয়েও খুশি হবে না। তা ছাড়া যে লোকটা ছোটখুকিকে পয়সার লোভে মডেলিং করায়, তার সামনে গিয়ে দাঁড়াবার ইচ্ছা আমার নেই। দিব্যজ্যোতি কথাগুলো বলছেন যখন তখনই আলো ফিরে এল। শোভাবাজারে লোডশেডিং শেষ হলে অনেক গলা থেকে একসঙ্গে আনন্দধ্বনি ছিটকে উঠত, কিন্তু এখানে কেউ কোনও আওয়াজ করল না। এবং তখনই দিব্যজ্যোতির খেয়াল হল নিবারণ জেনারেটর চালু করতে গিয়েছিল।
অথচ তার কোনও ফল পাওয়া যায়নি। ব্যাপারটা নিয়ে পরে কথা বলব।
মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে গেল দিব্যজ্যোতির। লতিকা তাঁকে ডাকছেন।
কি বলছ? বিরক্তি মুখে, গলায়।
বাথরুমে যাব।
যাবে তো যাওগে, আমাকে ডাকার কী আছে?
কীসব শব্দ হচ্ছে চারপাশে! তুমি একটু দাঁড়াবে?
লতিকার কথা বলতে অসুবিধে হচ্ছিল। তবু সেই মুচড়ানো গলায় বললেন, কি করব, আজ ওকে ভীষণ মনে পড়ছে। আমাকে ছোটবেলায় এইরকম বারান্দাওয়ালা বাড়ির কথা বলত! দিব্যজ্যোতি বললেন, লতু! তুমিও বলেছ, সী ইজ ডেড টু আস।
লতিকা নিজেকে মুক্ত করে ধীরে-ধীরে চেয়ারে গিয়ে বসলেন। দিব্যজ্যোতি একটু অসহায় চোখে তাকালেন। তাঁর শরীরে কম্পন আসছিল। হাঁটুদুটো হঠাৎ খুব দুর্বল হয়ে পড়ল। তিনি চেয়ারে বসে কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলেন। এবং এতদিন বাদে স্ত্রীকে চুম্বনের যে আনন্দ কিছুক্ষণ আগে। বেলুনের মতো ফুলছিল তা এখন চুপসে গেছে। ওই কান্না একটি কারণেই আসতে পারে লতিকার, তাঁরও। দুটো মানুষের সূত্র যদি এক হয় তাহলে একের অনুকরণ অন্যে টের পাবেই। তিনি কিছুতেই মুখটা মনে করতে চাইছিলেন না, তখন বারংবার সে ফিরে আসছে। উনিশ বছর। বয়সের তাঁর সবচেয়ে আদরের মেয়ে, ছোট মেয়ে, একেবারে বিয়ে করে খবর পাঠাল সে কাজটা করেছে। সামনে এসে দাঁড়িয়ে জানানোর সাহস হল না। শোভাবাজারের রক্ষণশীল বাড়ির অন্য আত্মীয়দের কথা ছেড়ে দিলেন। এই চোরের মতো কাজটার জন্যে প্রচণ্ড অপমানিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি আহত হয়েছিলেন লতিকা। বড় মেয়ে সম্বন্ধ এনেছিল। বড়জামাই-এর অফিসে কাজ করত ছেলেটি। দিল্লিতেই বাড়ি। মেয়েজামাই লিখেছিল ছোটমেয়েকে নিয়ে লতিকা যেন দিল্লিতে কয়েকদিন কাটিয়ে আসেন। সেখানেই মেয়ে দেখবে ছেলে। সেইমতো টিকিট কাটা হয়ে গিয়েছিল আর আজই এই কাণ্ড! ছেলে ছবি আঁকে। নিজের সিগারেটের খরচ যার ছবি বিক্রির টাকায় ওঠে না সে বিয়ে করেছে দিব্যজ্যোতি মল্লিকের। মেয়েকে। লতিকা তৎক্ষণাৎ ঘোষণা করেছিলেন তিনি ধরে নেবেন ছোট মেয়ে মৃত। মুখ দর্শন। করবেন না ঠিক করেও দিব্যজ্যোতিকে অনেকদিন নিজের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছিল। উনিশ বছর তিল তিল করে যে স্নেহ দিয়ে ওকে গড়ে তুলেছিলেন তা মুছে ফেলা মুশকিল। কথাটা জানার পর মেয়ে আর এ-মুখো হয়নি। দিব্যজ্যোতি জানেন না ফিরে এলে তিনি কি করতেন। তাঁর বিস্ময় লাগে, উনিশ বছরের অভ্যাস ভালোবাসা পরস্পরের হৃদয়ের স্পর্শ ম্লান হয়ে গেল মেয়ের কোন আকর্ষণের তাগিদে?কয়েক বছরের বা মাসের মধ্যে একটি পুরুষ কোন জাদুতে এত মূল্যবান হয়ে ওঠে? তারপর যখন কাগজের বিজ্ঞাপনে মেয়ের মোহিনী ছবি দেখতে লাগলেন, বুঝলেন মডেলিং করছে পেট ভরাতে, তখন তলানিটুকুও চলে গেল মন থেকে।
দাঁড়াব? আমি? বাথরুমের দরজায়? তুমি কি কচি খুকি? লতিকা আর কথা না বলে নেমে গেলেন বিছানা থেকে। নতুন জায়গা, দেওয়ালের গন্ধ এখনও মরেনি, ঘুম আসছিল না প্রথম রাতে। তাও যদি এল লতিকার ভূতের ভয় সেটা ভাঙিয়ে দিল। বালিশে মুখ ডুবিয়ে নিজের শরীর অনুভব করেছিলেন দিব্যজ্যোতি। হঠাৎ কানে একটা শব্দ বাজল। না, খালি বাড়ির শব্দ নয়, লতিকার হাত থেকে মগ পড়ে গেছে নিশ্চয়ই। তিনি আবার ঘুমাবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু আর ঘুম আসছে না। দিব্যজ্যোতি চিত হয়ে শুতেই মনে হল লতিকা এখনও ফেরেননি। যতই হোক এতক্ষণ কারও বাথরুমে থাকা বাড়াবাড়ি। তিনি শুয়ে-শুয়েই ডাকলেন লতু! কেউ সাড়া দিল না। অথচ বাথরুমটা তো লাগোয়াই। দিব্যজ্যোতি উঠলেন। চশমাটা নিতে গিয়েও নিলেন না। ভেজানো দরজা, ভেতর থেকে ছিটকিনি দেওয়া নেই, দিব্যজ্যোতি আবার ডাকলেন, লতু? তোমার হয়ে গেছে?
কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করেও সাড়া না পেয়ে দরজায় চাপ দিতেই বুক নিংড়ে আর্তনাদ ছিটকে উঠল দিব্যজ্যোতির। লতিকা বাথরুমের মেঝেতে পড়ে আছেন।
দৌড়ে কাছে যেতে গিয়ে দেওয়াল ধরে নিজেকে সামলালেন দিব্যজ্যোতি। শরীরটা যে এত বিকল হয়েছে তা আন্দাজেও ছিল না। তাঁর নিজের বুক ধড়াস-ধড়াস করছে। চোখের দৃষ্টি  ঝাঁপসা হয়ে আসছে। কোনওরকমে তিনি লতিকার শরীরের সামনে উবু হয়ে বসলেন। তাঁর খুবই কষ্ট হচ্ছিল। হাত তুলে লতিকার কাঁধ ধরলেন তিনি, লতুলতু। কী হয়েছে লতু? কথা বলো লতু।
কোনও সাড়া নেই। দিব্যজ্যোতি কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাঁর শরীরে এখন এমন সামর্থ্য নেই যে নিচে গিয়ে হাঁকাহাঁকি করে নিবারণকে ডাকবেন। কিন্তু একজন ডাক্তার আনা। দরকার এই বোধ সক্রিয় ছিল তাঁর। নিজের সমস্ত মানসিক শক্তি জড়ো করে শক্ত হতে চাইলেন। তিনি। তারপর আঙুল নিয়ে গেলেন লতিকার নাকের সামনে। নিশ্বাস কি পড়ছে? বোঝা যাচ্ছে না। দিব্যজ্যোতির মনে হল তাঁর আঙুলের চামড়া এত মোটা হয়ে গেছে বয়স হওয়ায় যে সামান্য আলতো চাপে ঠাওর করতে পারছেন না। মুখ তুলতেই কল দেখতে পেলেন তিনি। কি মনে হতেই কলের মুখ ঈষৎ খুলতেই জল পড়তে লাগল লতিকার মাথায়। সেই জল তিনি হাতে নিয়ে বুলিয়ে দিতে লাগলেন ওঁর গলায় কপালে।
আচমকা অন্যতর ভাবনা এল। এখন লতিকা যদি এইভাবেই চোখ বন্ধ রেখে চলে যায়? ওর এই সাধের নতুন বাড়িতে লতিকা ছাড়া তিনি কেমন করে থাকবেন? শুধু বাড়ি নয়, তাঁর প্রতিদিন। অভ্যাসের সঙ্গে যখন লতিকা জড়িত তখন তিনি এর পরের দিনগুলো বাঁচবেন কী করে? বুকের ভেতরটা হু-হুঁ করে উঠল দিব্যজ্যোতির। তিনি প্রাণপণে লতিকাকে ডাকতে লাগলেন।
এই সময় চোখ মেললেন লতিকা। মাথায় তীব্র যন্ত্রণা, জলের স্পর্শ এবং কানে নিজের নাম তাঁকে বিহ্বল করে তুলল এবং তখনই তিনি স্বামীর মুখ দেখতে পেলেন। ধীরে-ধীরে উঠে বসতে চেষ্টা করলেন লতিকা। দিব্যজ্যোতি জিজ্ঞাসা করলেন বিপর্যস্ত স্বরে, কি হয়েছিল লতু, তোমার কি হয়েছিল।
ভেজা চুল, সিক্ত জামায় শীত করল লতিকার। চোখ বন্ধ করে বললেন, পড়ে গিয়েছিলাম, হঠাৎ মাথাটা–। দুটি মানুষ পরস্পরকে অবলম্বন করে কোনওক্রমে প্রচুর সময় নিয়ে খাটে ফিরে এল। লতিকা পোশাক পরিবর্তন করার শক্তি পেলেন না। সিক্তবস্ত্র মুক্ত হয়ে চাদরে শরীর মুড়ে পড়ে রইলেন একপাশে। দিব্যজ্যোতি, শক্তিহীন, চোখের সামনে অন্ধকার নিয়ে, বুকভরতি যন্ত্রণায় প্রথম পদক্ষেপ বুঝেও চাদর টেনে তাঁর পাশে শুয়ে। বালিশের নিচ থেকে কৌটো বের করে একটা সরবিট্রেট বের করে নিজের মুখে দিয়ে তারপর দ্বিতীয়টি লতিকার মুখের দিকে বাড়িয়ে দিতেই শুনলেন, কী?
সরবিট্রেট!
থাক।
দুটো মানুষের শরীরে সাদা চাদর এমনভাবে পাশাপাশি টানটান যে আচমকা দেখলে দুটি মৃতদেহ মনে হওয়া অস্বাভাবিক হত না। লতিকার হাত বেরিয়ে এসে দিব্যজ্যোতির হাত আঁকড়ে ধরল। বাথরুমের খোলা কল তখন একটানা জল ঢেলে যাচ্ছে।

নিমগাছ-বনফুল


নিমগাছ
বনফুল

কেউ ছালটা ছাড়িয়ে নিয়ে সিদ্ধ করছে।
পাতাগুলো ছিঁড়ে শিলে পিষছে কেউ।
কেউ বা ভাজছে গরম তেলে।
খোস দাদ হাজা চুলকুনিতে লাগাবে।
চর্মরোগের অব্যর্থ মহৌষধ।
কচি পাতাগুলো খায়ও অনেকে।
এমনি কাঁচাই…..

কিংবা ভেজে বেগুন- সহযোগে।
যকৃতের পক্ষে ভারী উপকার।
কচি ডালগুলো ভেঙে চিবোয় কত লোক…। দাঁত ভালো থাকে।
কবিরাজরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
বাড়ির পাশে গজালে বিজ্ঞরা খুসী হন।
বলেন-“নিমের হওয়া ভাল, থাক, কেটো না।”
কাটে না, কিন্তু যত্নও করে না।
আবর্জনা জমে এসে চারিদিকে।
শান দিয়ে বাধিয়েও দেয় কেউ- সে আর এক আবর্জনা।
হঠাৎ একদিন একটা নূতন ধরণের লোক এল।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে বেয়ে রইল নিমগাছের দিকে। ছাল তুললে না, পাতা ছিঁড়লে না, ডাল ভাঙ্গলে না। মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু।
বলে উঠলো, “বাঃ কি সুন্দর পাতাগুলো…..কি রূপ। থোকা থোকা ফুলেরই বা কি বাহার….এক ঝাঁক নক্ষত্র নেমে এসেছে যেন নীল আকাশ থেকে সবুজ সায়রে। বাঃ–”
খানিকক্ষণ চেয়ে থেকে চলে গেল।`
কবিরাজ নয়, কবি।
নিমগাছটার ইচ্ছে করতে লাগল লোকটার সঙ্গে চলে যায়। কিন্তু পারলে না।মাটির ভেতর শিকড় অনেক দূরে চলে গেছে। বাড়ির পিছনে আবর্জনার স্তূপের মধ্যেই দাঁড়িয়ে রইল সে।
ওদের বাড়ীর গৃহকর্ম-নিপুণা লক্ষ্ণী বউটার ঠিক এই দশা।