ভারত-তীর্থ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভারত-তীর্থ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


হে মোর চিত্ত,পূণ্য তীর্থেজাগো রে ধীরে--
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।
হেথায় দাঁড়ায়ে দু-বাহু বাড়ায়ে নমি নর-দেবতারে,
উদার ছন্দে পরমানন্দে বন্দন করি তাঁরে।
ধ্যান-গম্ভীর এই যে ভূধর, নদীজপমালাধৃত প্রান্তর,
 হেথায় নিত্য হেরো পবিত্র  ধরিত্রীরে
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।


কেহ নাহি জানে কার আহ্বানে কত মানুষের ধারা
দুর্বার স্রোতে এল কোথা হতে সমুদ্রে হল হারা।
হেথায় আর্য, হেথা অনার্য হেথায় দ্রাবিড়, চীন--
শক-হুন-দল পাঠান মোগল এক দেহে হল লীন।
পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার, সেথা হতে সবে আনে উপহার,
দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে  যাবে না ফিরে,
এই ভারতের মহামানবের  সাগরতীরে।


রণধারা বাহি জয়গান গাহি উন্মাদ কলরবে
ভেদি মরুপথ গিরিপর্বত যারা এসেছিল সবে,
তারা মোর মাঝে সবাই বিরাজে কেহ নহে নহে দূর,
আমার শোণিতে রয়েছে ধ্বনিতে তারি বিচিত্র সুর।
হে রুদ্রবীণা, বাজো, বাজো, বাজো, ঘৃণা করি দূরে আছে যারা আজও,
বন্ধ নাশিবে, তারাও আসিবে দাঁড়াবে ঘিরে
এই ভারতের মহামানবের  সাগরতীরে।


হেথা একদিন বিরামবিহীন  মহা ওংকারধ্বনি,
হৃদয়তন্ত্রে একের মন্ত্রে  উঠেছিল রনরনি।
তপস্যাবলে একের অনলে বহুরে আহুতি দিয়া
বিভেদ ভুলিল, জাগায়ে তুলিল একটি বিরাট হিয়া।
সেই সাধনার সে আরাধনার যজ্ঞশালায় খোলা আজি দ্বার,
হেথায় সবারে হবে মিলিবারে আনতশিরে--
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।


সেই হোমানলে হেরো আজি জ্বলে দুখের রক্ত শিখা,
হবে তা সহিতে মর্মে দহিতেআছে সে ভাগ্যে লিখা।
এ দুখ বহন করো মোর মন শোনো রে একের ডাক।
যত লাজ ভয় করো করো জয় অপমান দূরে থাক।
দুঃসহ ব্যথা হয়ে অবসান জন্ম লভিবে কী বিশাল প্রাণ।
পোহায় রজনী, জাগিছে জননী বিপুল নীড়ে,
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।



এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার,
এসো হে পতিত করো অপনীত সব অপমানভার।
মার অভিষেকে এসো এসো ত্বরা    মঙ্গলঘট হয় নি যে ভরা,
সবারে-পরশে-পবিত্র-করা তীর্থনীরে।
আজি ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।


1 comments:

  1. সমুদ্র, মুদ্র হয়েছে।
    সংশোধন করে নেবেন আশা করি।. ধন্যবাদ।

    ReplyDelete